শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। মালিবাগ বাজার থেকে রামপুরার উদ্দেশে দুই যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন নজরুল।
পথিমধ্যে আবুল হোটেলের কাছাকাছি গেলে তিনি রাস্তায় ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা ৫০ হাজার টাকার একটি বান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন।
টাকাটি হাতে তুলে নিয়ে নিজের কাছে রেখে মূল মালিকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এমন সময় তার রিকশার যাত্রীরা টাকাটি মালিকের কাছে পৌঁছে দিতে বলেন, তবে তা হস্তান্তর করেননি নজরুল।
রিকশা চালাতে গিয়ে কিছুদূর এগিয়েই তিনি ট্রাফিক পুলিশের একটি দল দেখতে পান। এ সময় সেই রিকশার যাত্রীসহ পুলিশ ও আরও কয়েকজন লোকও ছিলেন সেখানে।
ঘটনাস্থলে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আরিফুল ইসলামের হাতে টাকাটি তুলে দেন সৎ মানুষ নজরুল। পরে রমনা থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপ-পরিদর্শক মো. ছাত্তারের কাছে টাকাগুলো হস্তান্তর করা হয়।
রিকশাচালক নজরুলের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানায়। বর্তমানে রামপুরার একটি গ্যারেজে থেকে রিকশা চালান তিনি। বাড়িতে মা-বাবা ছাড়াও স্ত্রী রয়েছেন।
বাংলানিউজকে নজরুল জানান, দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন হয়। এরমধ্যে রিকশার ভাড়া ১০০ টাক দেওয়া দেয়াসহ নিজের খাওয়া বাবদ ৩০০ টাকা খরচ হয়।
‘এরপরও প্রতিমাসে প্রায় ১২ হাজার টাকার মতো বাড়িতে বাবা মা ও স্ত্রীর জন্য পাঠাতে পারি। এগুলো নিয়েই আমি খুশি। ’
তিনি জানান, তার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা খুবই মূল্যবান। এরপরও লোভ করেননি। সৎভাবে বাঁচার জন্যই এ লোভ করেননি খেটে খাওয়া এই মানুষটি।
নজরুলের ভাষ্য, রিকশার যাত্রীরা কইলো সামনে কোনো পুলিশের কাছে দিয়া দেবো। তারা টাকাটা চাইছিল। কিন্তু আমি দেই নাই। আমি পাইছি আমিই এইডার মালিকের কাছে দিমু।
‘পরে আগাইয়া পুলিশ দেইখ্যা টাকাটা তাদের কাছে দিয়া দিলাম। আমার টিপসই নিছে। এরপর চইলা আইছি,’ বলেন তিনি।
রিকশায় সাবেক সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মো. আবদুল মান্নান ও তার ছেলে ছিলেন যাত্রী হিসেবে।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, আমি আমার ছেলেকে নিয়ে রিকশায় চড়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা আবুল হোটেলের একটু আগে ওভার ব্রিজের নিচে ময়লার পাশে টাকাটা পড়ে থাকতে দেখি। রিকশাওয়ালা টাকাটা তুলে নেয় ও পরে ট্রাফিক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এ বিষয়ে রমনা থানার এসআই ছাত্তার বলেন, রিকশাওয়ালার কাছ থেকে সব ধরনের তথ্য নিয়ে টাকাগুলোও রাখা হয়েছে।
‘টাকার সঠিক মালিক খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। আর মালিক পাওয়া না গেলে আমরা টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে দেবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট, ২০১৭
এমএএম/এমএ