ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি টাকায় সপরিবারে হজে ধর্মমন্ত্রীর আত্মীয়রা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
সরকারি টাকায় সপরিবারে হজে ধর্মমন্ত্রীর আত্মীয়রা! এমপি ফাতেমা তুজ জোহরা রাণী, তার ছেলে রাফিউল আদনান প্রিয়ম এবং ধর্মমন্ত্রীর ছেলে মোহিত উর রহমান শান্ত

ময়মনসিংহ: স্বামী ময়মনসিংহ শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম তারার সঙ্গে ২০১৫ সালে সরকারি খরচে হজ করেছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ফাতেমা তুজ জোহরা রাণী। এর ঠিক দু’বছরের মাথায় আবারও তিনি একইভাবে হজ করতে যাচ্ছেন। অবশ্য এবার তার সঙ্গী ছেলে রাফিউল আদনান প্রিয়ম।

বেড়েছে হজ-চিকিৎসক সহায়তাকারী, গুরুত্ব মন্ত্রীর এলাকার!

প্রয়াত প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম তারা ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের আত্মীয়। সেই সূত্রে তার এমপি স্ত্রী দ্বিতীয়বার আর সন্তান প্রথমবার সুযোগ পেলেন।

চলতি বছর রাষ্ট্রীয় খরচে হজ পালনের জন্য নির্বাচিত হওয়া ৩১৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ধর্মমন্ত্রীর আরও বেশ কয়েকজন আপনজন। শুধু তাই নয়, নিজ এলাকাকে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এতে এমন অনেক জেলাই আছে যেখান থেকে একজনও নেই। এতে চারিদিকে সমালোচনার ঝড়।  

রাষ্ট্রীয় খরচে চার এমপি হজে, ময়মনসিংহেরই ৮১ জন!

তালিকাতে আরেকটি বিষয় হলো, একই পরিবারের একাধিকজন দারুণ সৌভাগ্যবান হয়েছেন, তারা একত্রে হজে যেতে পারছেন সরকারি টাকায়।  

তালিকায় থাকা কারো কারো নামের পাশে ‘রহস্যজনক’ কারণে আবার পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা নেই। আবার কারো কারো বেলাতে বাবা-মা’র নাম পর্যন্ত রাখা হয়নি। মূলত বিত্তবানদের সরকারি খরচে হজ পালনের সুযোগ করে দেওয়ার কারণেই বেশিরভাগেরই পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি বলে সমালোচনা হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, ধর্মমন্ত্রীর ছেলে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) আবু সাঈদ নিজেদের পছন্দ মতো এ তালিকা প্রস্তুত করেছেন।

বাদ দেননি হঠাৎ তাদের কাছের লোক হয়ে ওঠা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ খান পাঠানকেও। অথচ এই পাঠানের অর্থের সংকট নেই। জেলার রাজনীতিতে নিজেদের জায়গা পাকা করতেই তারা এমন অভিনব কাণ্ড ঘটিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন বলে অন্য রাজনৈতিক নেতারা বলছেন।   

রাষ্ট্রীয় খরচে হজ করার জন্য নির্বাচিত হওয়া ৩১৮ জনের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৫৪ নম্বর ক্রমিকের শামসুল আলম ধর্মমন্ত্রীর চাচাতো ভাই। তার পাশাপাশি হজে যাচ্ছেন তার স্ত্রী সালেমা খাতুন সিদ্দিকীও।  

এর আগেও দু’দফায় মন্ত্রীর ভাই ও স্বজনরাও হজ করে এসেছেন। অবশ্য এবার বেশ কয়েকজন মসজিদের ইমামকে তালিকায় রাখা হয়েছে।  

১৫৭ নম্বর ক্রমিকের নুরুল ইসলামও ধর্মমন্ত্রীর স্বজন। আবার ২৮৫ নম্বর ক্রমিকে নাম থাকা নাজমুল হকের নামের পাশে বাবা হিসেবে নুরুল ইসলামের নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে তার বেলাতে পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। তারা দু’জনই বাবা-ছেলে কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।  

১৯১ নম্বর ক্রমিকে নাম থাকা মাসিউল গণি বিপ্লবের বাবার নাম উল্লেখ করা হয়নি। তিনিও ধর্মমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলে জানা গেছে। একই পরিবার থেকে দু’জন করে হজ করতে যাচ্ছেন। তারা হলেন, জোহরা খাতুন ও তার জামাতা আবু বক্কর শেখ, হাজেরা খাতুন ও তার স্বামী সোহরাব মোল্লা। রহস্যজনক কারণে তাদের নামের পাশে কোনো ঠিকানার উল্লেখ নেই।

মন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি আকুয়া ও নগরীর নাটক ঘর লেন এলাকার বাসিন্দারাও ঢুকে গেছেন সরকারি খরচে। তারা হলেন, আকুয়া মোড়লবাড়ি এলাকার এমদাদুল হক আলম, আকুয়া দক্ষিণ পাড়ার তারা মিয়া মেম্বার, আসলাম উদ্দিন, নাটক ঘর লেন এলাকার মীর নুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আক্কাস আলী।  

সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে সবাইকে ছাপিয়ে যারা এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তারা মূলত ধর্মমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (এপিএস) আবু সাঈদের ঘনিষ্ঠ। তার কারসাজিতেই এ তালিকায় নাম ওঠা গিয়াস উদ্দিন ও মুজিবুর রহমান আকন্দের নামের পাশে ‘মুদাপুর’, ‘নিলীক্ষা’ উল্লেখ করা হয়েছে। রহস্যজনক কারণেই এখানে চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের কথা বলা হয়নি।  

মন্ত্রীর জামানায় নিজের এলাকার ও পছন্দের লোকদের রাষ্ট্রীয় খরচে হজের তালিকায় জায়গা করে দিতেই বছর বছর বাড়ছে এ তালিকা। ২০১৪ সালে যা ছিল ১২৪ জনের। ২০১৫ সালে এসে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৬৩ জনে। ওই বছর ধর্মমন্ত্রীর এলাকার লোক ছিলেন ৪৭ জন। ২০১৬ সালে রাষ্ট্রীয় খরচে হজ করার সুযোগ পান ২৮৩ জন। সেবারও মন্ত্রীর এলাকার লোকজনের প্রাধান্য ছিল। আর এ বছর সরকারি খরচে তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৩১৮ জনের নাম।  

ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর হজ পালনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই তালিকাও বেড়েছে। তবে সরকারি খরচে এর আগে কেউ হজ করে থাকলে তালিকায় এবার তার নাম থাকলেও তিনি বাদ পড়ে যাবেন। কেউ তথ্য গোপন করে থাকলে ঠিক করেননি।  

তালিকায় মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়ে তিনি বলেন, তার বেশ কয়েকজন স্বজন রয়েছেন এটা ঠিক। তবে এটি তার এখতিয়ার। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এমএএএম/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।