ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

নাস্তা বানাতে গিয়ে লাশ হলেন লাইলী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৭
নাস্তা বানাতে গিয়ে লাশ হলেন লাইলী গৃহকর্তা মঈনুদ্দিনের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা

ঢাকা: সকালের নাস্তা বানানোর কথা বলে দারোয়ান রহিমকে দিয়ে গৃহকর্মী লাইলীকে বাসায় ডেকে আনে গৃহকর্তা মঈনুদ্দিন। গৃহকর্মী লাইলী বেগমের জা নুর নাহার বাংলানিউজকে এ কথা জানান।

নুর নাহার বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে ওই মালিকের দারোয়ান করিম বাসায় এসে বলে, 'লাইলী তোরে স্যার ডাকে, একটু নাসতা বানাইয়া দিয়া আয়। ' এই কথায় লাইলী নাস্তা বানাতে যায়।

এরপর শুনি যে লাইলী মারা গেছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'লাইলীকে নির্যাতনের পর গলা চেপে হত্যা করে ওই বাসার মালিক মঈনুদ্দিন। ' 

এর আগে, শুক্রবার (০৪ আগস্ট) রামপুরার দক্ষিণ বনশ্রীর জি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়ি থেকে গৃহকর্মী লাইলীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বেলা ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাড়ির গৃহকর্তা মঈনুদ্দিনের দাবি, লাইলী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।  

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বনশ্রীর ‘জি’ ব্লকের ওই বাসায় এলাকাবাসী ভাঙচুর ও হামলা চালায়।   এ সময় দুপুর ১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে হিন্দু পাড়ার বাসিন্দাদের সংঘর্ষ ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

এদিকে গৃহকর্মী মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ির মালিক মঈনুদ্দিন ও বাড়ির দারোয়ান করিমকে আটক করে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

নিহতের স্বজন নুর নাহার বাংলানিউজকে বলেন, গত এক বছর ধরে বনশ্রীর জি ব্লকের মঈনুদ্দিনের বাসায় আমরা গৃহকর্মীর কাজ করি। ৬ হাজার টাকা করে আমাদের মাসিক বেতন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমাদের গত ৫ মাসের বকেয়া বেতন বকেয়া ছিল। টাকা চাইলেই গৃহকর্তা খারাপ ব্যবহার করতো।  

তিনি অভিযোগ করেন, শুক্রবার সকালেও নাস্তা বানাতে গেলে লাইলীকে নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকে গলা চেপে হত্যা করে মালিক মঈনুদ্দিন।

জানা গেছে, বনশ্রীর ‘জি’ ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসার মালিক মঈনুদ্দিন। স্ত্রী শাহনাজ বেগমসহ মেয়ের জামাই নিয়ে তিনি নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় থাকেন। ৭ তলা এ বাসার অন্যান্য ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়ারা বসবাস করেন।  

এর আগেও গৃহকর্তা মঈনুদ্দিন আরও দুই গৃহকর্মীকে নির্যাতন করেছে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।  

তবে গৃহকর্তা মঈনুদ্দিনের দাবি, গৃহকর্মী লাইলী বাসায় কাজে আসার পর হঠাৎ রুমের ভেতর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পরে দারোয়ানসহ অন্যরা মিলে তাকে প্রথমে ফরাজি ও পরে ঢামেকে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়।  

নিহত লাইলী বেগম বনশ্রীর পার্শ্ববর্তী হিন্দু পাড়ায় বসবাস করতেন। তার পাঁচ বছরের এক মেয়ে ও আড়াই বছরের এক ছেলে সন্তান আছে। লাইলীর স্বামী জামাল উদ্দিন ভারতের কারাগারে বন্দি আছেন বলে জানা গেছে।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কিছু উৎসুক জনতা এ ঘটনা ঘটালেও আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।

তিনি বলেন, গৃহকর্মী মৃত্যুর ঘটনায় আমরা বাসার মালিক ও দারোয়ানকে আটক করেছি। নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
এসজেএ/আরআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।