ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জলদস্যু না থাকায় স্বস্তি, ইলিশ না পাওয়ায় অস্বস্তি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
জলদস্যু না থাকায় স্বস্তি, ইলিশ না পাওয়ায় অস্বস্তি জাল মেরামত করে অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। ছবি: বাংলানিউজ

পাথরঘাটা (বরগুনা): উপকূলের জেলেদের কাছে এক সময়কার আতঙ্ক ছিল জলদস্যু আর বনদস্যু। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উত্তাল গভীর সমুদ্রের চেয়েও দস্যুদের বেশি ভয় পেতেন তারা। তখন মাছ কম-বেশি পেলেও ততোটা দুশ্চিন্তা হতো না জেলেদের, যতোটা হতো জলদস্যুদের নিয়ে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক বঙ্গোপসাগর এখন প্রায় জলদস্যুশূন্য। ফলে উপকূলের জেলেদের মাঝে আতঙ্কের বিপরীতে স্বস্তি বিরাজ করছে।

তবে মৌসুমের মধ্যভাগেও কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলে, ট্রলার মালিক-শ্রমিক ও আড়তদাররা।

বঙ্গোপসাগরের জেলে ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশের মৌসুম হচ্ছে সাড়ে চার মাস- জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত। এর মধ্যে প্রায় দেড় মাস চলে গেছে। ভাদ্র ও আশ্বিনে সাগর উত্তাল থাকবে। তখন গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরতে পারবেন না তারা।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগ‍ুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, আষাঢ় ও শ্রাবণের ভারী বর্ষণে সাগর-নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। কিন্তু গভীর সমুদ্র এবং বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রাসহ বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক নদ-নদীতে এখনও খুব একটা ইলিশ ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে। কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। ট্রলার মালিক ও আড়তদাররাও চিন্তিত।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে নোঙর করা নেই ট্রলার। দু’একটি থাকলেও তেমন কোনো ইলিশ দেখা যাচ্ছে না। জেলেদের অনেকেই অলস সময় কাটাচ্ছেন। ঝিমিয়ে পড়া আড়তদারদের দাদনের টাকা পরিশোধ নিয়েই বেশি চিন্তিত তারা।

দু’দিন আগে সাগর থেকে ফিরে আসা এফবি ফরিদ ট্রলারের মালিক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার ট্রলারটি দশদিন পর ঘাটে এসেছে। বাজার-সদাইসহ দু’লাখ টাকা ব্যয় করে মাছ পাওয়া গেছে মাত্র ১৫টি। যা বিক্রি হয়েছে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকায়।

ট্রলার মালিক আবুল হোসেন ফরাজী বলেন, ‘এখন সাগরে কোনো জলদস্যু নেই। নির্বিঘ্নে ট্রলার পাঠাতে পারছি এবং জেলেরাও শান্তিতে মাছ শিকার করছেন। কিন্তু কাঙ্খিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না’।

জেলে মো. জাকির মাঝি বলেন, ‘২৫ বছর ধরে সাগরে মাছ শিকার করি। অন্তত পাঁচবার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ও নির্যাতিত হয়েছি। এখন নির্বিঘ্নে সাগরে মাছ শিকার করছি’।

পাথরঘাটা পৌরসভার কাজীবাড়ি এলাকায় এফবি ভাই-বোন ট্রলারের জাল মেরামত করছিলেন পনু মাঝি, শাহজাহান, খলিল ফরাজীসহসহ ১০ জন জেলে। তারা বলেন, ‘সাগরে মাছ নাই, তাই ছেড়া জাল মেরামত করে সময় কাটাই। বঙ্গোপসাগরে মাছ না পড়ায় আমরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছি। মালিকের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিয়েছি। মাছ না পেলে কিভাবে এ টাকা শোধ করবো? কিভাবে আমাদের সংসার চলবে?’

জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি বলেন, ‘সাগরে দস্যু না থাকায় আমাদের জেলেরা নিরাপদে মাছ শিকার করতে পারছেন’।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গভীর সমুদ্রে ও কিছু কিছু উপকূলের নদ-নদীতে তেমন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।