ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মেঘ জমলেই জাগে মৃত্যুভয়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
মেঘ জমলেই জাগে মৃত্যুভয়! খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি। ছবি: অপু দত্ত

খাগড়াছড়ি:  ‘আকাশে মেঘ জমলেই মনে ভয় উঁকি দেয়, মৃত্যু ভয়। এই বুঝি বৃষ্টি নামবে। ধসে পড়বে পাহাড়। শেষ সম্বল ঘরটুকুও চাপা পড়বে ধসে পড়া পাহাড়ের নিচে।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধ্য শালবনের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া (৪৫)। আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখলেই আতংক দাগ কেটে যায় তার মনেও।

শুধু দিনমজুর বাচ্চু-ই নন; সাজিয়া বেগম, আম্বিয়া খাতুনসহ আরো অনেকেই এমন আশংকার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বর্ষায়।

বিভিন্ন বেসরকারি হিসেবে খাগড়াছড়ি জেলাতে অন্তত সহস্রাধিক পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন।

সরজমিন দেখা গেছে, জেলা শহরের শালবন, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, সবুজবাগ, কুমিল্লা টিলাসহ কয়েকটি এলাকা, জেলা সদরের বিভিন্ন গ্রাম এবং জেলার মানিকছড়ি, দীঘিনালা, রামগড়, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় অনেকগুলো পাহাড়ি ও বাঙালি পরিবার পাহাড়ের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছেন।

এরমধ্যে কিছু ভূমিহীন মানুষ বাধ্য হয়ে বসবাস করলেও বহু পরিবারই প্রভাব খাটিয়ে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলেছেন। তারা সুযোগ বুঝে পাহাড়ের ঢালে মাটি কেটে রাখেন, যাতে বৃষ্টি এলেই পাহাড় ধসে পড়ে। এরপর তারা বসতি সম্প্রসারণ করে থাকেন। জেলা সদরের সবুজবাগ এলাকার অধিকাংশ পরিবারই পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করেছেন। অনেকে আবার অনুমতি ছাড়াই বড়- ছোট পাহাড় কেটে ঘর তুলেছেন। খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি।  ছবি: অপু দত্ত

জেলা শহরের শালবনে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারিদের অধিকাংশই ভূমিহীন। যাদের অনেকে সরকারি উদ্যোগে পূনর্বাসিত হলেও তারা নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে।

মধ্যশালবনের বাসিন্দা সাজিয়া বেগম বলেন, পুনর্বাসন সূত্রে পাওয়া ৫ একর ভূমি থেকে তুলে এনে এখানে (শালবন) বসানো হয়েছে। পাহাড় কেটে বসতি করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি।

পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের বিকল্প স্থানে পূনর্বাসনের দাবি জানান তিনি।

গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে অন্য দুই পাহাড়ি জেলার মত খাগড়াছড়িতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্মীছড়ি ও রামগড়ে পৃথক তিনটি পাহাড় ধসের ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু ঘটে। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি ও দীঘিনালায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ হতে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি।  ছবি: অপু দত্ত
২০১১ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা মামলার প্রেক্ষিতে পরের বছর হাইকোর্ট খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর এবং কক্সবাজার এলাকায় পাহাড় কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হলেও তা এতো বছরেও কার্যকর করা হয়নি।

অতিসম্প্রতি পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড় ধসে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রবল বর্ষণ ও বন্যার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলোর তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম কাউছার হোসেন বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ তালিকা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।