এসময় তার পিছু নিয়ে পার হলো অপর একটি ট্রাক। সেই ট্রাকের চালকের নাম বেল্লাল হোসেন।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে সরেজমিন সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল-মহাসড়কের সাহেবগঞ্জ এলাকায় গেলে এ ধরনের দৃশ্য চোখে পড়ে। স্থানীয় এক ভ্যান চালক জুব্বার আলী বলেন, এরকম দৃশ্য নতুন কিছু নয়, অহরহই দেখা যায়। গাডড়িগুলো দোল খেতে খেতে যায়, মনে হয় কখন যেন কাত হয়ে উল্টে পড়ে।
কথা হয় ওই দুই ট্রাক চালকের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তারা বলেন, এ মহাসড়কের এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে ২০ কিলোমিটার যেতে এমনিতে ২ ঘণ্টা লেগে যায়।
তারপর যদি যানজট লাগে তাহলে তো ৪/৫ ঘণ্টার আগে বের হওয়াই যাবে না। বিশেষ করে পণ্যবাহী যানবাহন নিয়ে এ রাস্তায় চলাই দায় হয়ে পড়েছে। এত বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, গাড়ি চালাতে গেলে হেলে দুলে ওঠে। মনে হয় এই বুঝি উল্টে যাবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে আমাদের।
সাহেবগঞ্জ বাজার থেকে ঘুরকা বেলতলা বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পথ। আর এটুকু পথের মধ্যেই চারটি পয়েন্টে অসংখ্য গর্ত আর খানা-খন্দ দেখা গেল। আর চান্দাইকোনা পাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তত ১০/১২টি স্থানে মহাসড়কের ভয়াবহ অবস্থা চোখে পড়ে।
ঘুরকা বাজারের কাছে কথা হয় শ্যামলী পরিবহনের চালক আনিসুর, ডিপজল পরিবহনের সুপারভাইজার আনোয়ার, ট্রাক ড্রাইভার মোশারফ ও হেলপার নুরন্নবীসহ বেশ কয়েকজন
চালক ও হেলপারের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তারা বলেন, চান্দাইকোনা থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা একেবারেই জরাজীর্ণ। ২০ কিলোমিটার এ মহাসড়কের প্রায় সবখানেই বিটুমিন উঠে গেছে। অন্তত ১০/১২টি পয়েন্টে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। ধীরে ধীরে এসব খানা-খন্দ বড় হয়ে গর্তে পরিণত হচ্ছে। আর বৃষ্টি
হলে তো কথাই নাই। গর্তগুলোতে পানি আর কাঁদাতে ভর্তি হয়ে চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়ে।
যানবাহনের চালক-হেলপারদের অভিযোগ এত দুর্ভোগের পরও কর্তৃপক্ষের নজর নেই এ মহাসড়কের দিকে। মাঝে মধ্যে তারা গর্তগুলোতে ইট দিয়ে হেরিংমন করে দিলেও দু’দিন পরই তা উঠে যায়। কষ্ট হয় আমাদের আর সাধারণ যাত্রীদের।
দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী হক এন্টারপ্রাইজে উঠলে কথা হয় এর যাত্রী আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি ঢাকায় বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। প্রতি সপ্তাহেই তাকে ঢাকা-রংপুর যাতায়াত করতে হয়। এ মহাসড়কটি তার কাছে নরক যন্ত্রণার মতো মনে হয় বলে জানালেন তিনি।
অপর যাত্রী রংপুরের বদরগঞ্জ এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন, দিনাজপুরের পার্বতীপুরের আব্দল কাইয়ুম, ধাপেরহাটের রুকাইয়া খানম, পীরগঞ্জের রাসেল আহম্মেদ, মোস্তাফিজসহ পুরোবাসের যাত্রীরা সায় দিলেন তার কথায়।
ঘুরকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘুরকা বাজারের দু’দিকে মোট আধা কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে চারটি জায়গা একেবারেই ভাঙাচোরা। এ কারণে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলছে।
স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারীরাও পড়ছে সমস্যায়।
রায়গঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, রাস্তা খারাপের কারণে অত্র অঞ্চলের কৃষিপণ্য শহরে রফতানি করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়েছে।
চান্দাইকোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী আব্দুল হান্নান খান বলেন, চান্দাইকোনা-হাটিকুমরুল
মহাসড়কটি এখন শুধু উত্তরাঞ্চলের যানবাহনগুলোরই সমস্যা নয়। জরাজীর্ণ রাস্তার কারণে পুরো রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গা অঞ্চলের মানুষেরও দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে চলেছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম শিহাব বলেন, মহাসড়ক খারাপ হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের যানবাহনগুলো বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছে। চান্দাইকোনা-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে যাতায়াত শুরু করেছে। এতে ওই সড়কটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এ রাস্তাটির অবস্থা খারাপ। এ কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা কিংবা যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে ওই মহাসড়কটি সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। তবে পুরো সড়ক সংস্কারের জন্য বড় প্রকল্প পাশ করানোর প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্প পাশ হলেই ওই সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ২৯ জুলাই, ২০১৭
আরএ