ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তবু কমছে না চালের দাম!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
তবু কমছে না চালের দাম! কমছে না চালের দাম!

বগুড়া: শস্য ভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলের বগুড়ায় সেদ্ধ ও আতপ চালের লাইসেন্সধারী মিলার রয়েছেন ২ হাজার ১৩৫ জন। এছাড়াও কয়েক হাজার চাতাল ব্যবসায়ী রয়েছেন। এসব চাতালের সিংহভাগ দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর উপজেলায়। তারপরেও কমছে না চালের দাম!

কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, লাইসেন্সধারী মিলারদের চাতালে একসঙ্গে আড়াইশ’ থেকে পাঁচশ’ মণ ধান শুকানো যায়। এসব চাতালের বিপরীতে ৫-৭ জন শ্রমিক কাজ করেন।

এছাড়া বাকি চাতালগুলোয় ধান শুকানো যায় ৫০ থেকে ১৫০ মণ করে। এরমধ্যে বেশির ভাগ চাতালে ধান ধরে ৫০-৬০ মণ।

গেল জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই উত্তরাঞ্চলের ধান মোকামগুলো ধানশ‍ূন্য হতে থাকে। জেলায় প্রায় ২০-২৫টির মতো অটোমেটিক রাইস মিল রয়েছে। এসব মিল মালিকরা উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন মোকাম থেকে বিপুল পরিমাণ ধান কিনে চাহিদার অতিরিক্ত ধানের মজুদ গড়েন। একই কাজ করেন একশ্রেণির বড় বড় চাতাল মালিকরা।

ফলে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ধানের মোকাম ধানশূন্য হয়ে পড়ে। শুরু হয় কৃত্রিম সঙ্কট। বাড়তে থাকে চালের দাম। একইভাবে ধানের দাম বাড়তে থাকে। ধানের অভাবে ছোট ও মাঝারি চাতালগুলো বন্ধ হতে থাকে। এরপর বড় চাতাল মালিকদের একই পরিণত ঘটতে থাকে।

সময়ের ব্যবধানে চাহিদামতো ধান না পেয়ে জেলার অনেক বড় ব্যবসায়ীও চাতাল বন্ধ করতে বাধ্য হন। অনেকেই অন্য ব্যবসার পেছনে ঝুঁকে পড়েন। তবে এ সময়ের মধ্যে এসব ব্যবসায়ীরা লাভের ষোল আনাই হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও তারা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ।  
  
এরই মধ্যে সরকার মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু লোকসানের ঠুনকো অজুহাত তুলে বিভিন্ন সময় সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী লাইসেন্সধারী সেই মিলাররা সরকারকে চাল দিতে অস্বীকৃতি জানান।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারিভাবে এ জেলায় মোট ৬৮ হাজার ৮শ’ ৮ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো।

দফায় দফায় সভা করে সংশ্লিষ্টরা জেলার মোট মিলারের মধ্যে মাত্র ৭শ’ ১৮ জন মিলার সরকারকে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ করাতে সমর্থ হন। এরমধ্যে সেদ্ধ চালের মিলার ৭শ’ ৭জন ও আতপ চালের মিলার ১১ জন।  

চুক্তি অনুযায়ী এসব মিলাররা সরকারকে মোট প্রায় ২৩ হাজার ৪৯২ মেট্রিকটন চাল দেবেন। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত সেদ্ধ ও আতপ ১৭ হাজার ২১৭ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ হয়েছে। ১ আগস্ট পর্যন্ত চাল সংগ্রহ অব্যাহত থাকবে।

এদিকে চালের দাম কমাতে সরকার শুল্ক হার কমায়। পাশাপাশি বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানি করে সরকার। ইতোমধ্যে সেই চাল দেশে প্রবেশও করেছে। কিন্তু সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের পরপরই পাশের দেশে চালের দাম বেড়ে যায়। এতে সরকার উদ্যোগ দেশীয় চালের বাজার কমাতে এখনো প্রভাব ফেলতে পারেনি মন্তব্য শেরপুর থানা চাউলকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদের।

এছাড়া বাড়তি লাভের বিষয়টিও বাংলানিউজের কাছে অস্বীকার করেন এই নেতা। তবে দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে জেলা চাউল কল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে চলতি রোপা-আউশ মৌসুমের ধান সীমিত আকারে বাজারে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু সেটা চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য বলে জাহাঙ্গীর আলম, আইয়ুব আলী, আলমগীর হোসেনসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান।

এসব ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান বাজারে বিআর-২৮ প্রতি মণ ধান ১০৫০-১১০০ টাকা, একইজাতের ধানের চাল প্রতিবস্তা (সাড়ে ৯৩ কেজি) ৪০৫০-৪১০০টাকা, বিআর-২৯ প্রতি মণ ধান ১০০০-১০৫০ টাকা, চাল প্রতি বস্তা ৩৮৫০-৩৯০০ টাকা, কাটারিভোগ প্রতি মণ ধান ১১০০-১১৫০ টাকা, প্রতি বস্তা চাল ৪৪০০-৪৫০০ টাকা, মিনিকেট প্রতি মণ ধান ১১০০-১১৩০ টাকা, প্রতি বস্তা চাল ৪৩০০-৪৪০০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গেল সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা ধানের দাম ছিলো সাড়ে ২১ টাকা থেকে সাড়ে ২২ টাকা। প্রতি কেজি চালের (মোটা) দাম ছিলো সাড়ে ৩৫ থেকে সাড়ে ৩৬ টাকা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ধানের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দাম বেড়ে প্রতি কেজি মোটা চাল সাড়ে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে।

তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমদানিকৃত চাল ও নতুন মৌসুমের ধান পুরোপুরিভাবে বাজারে এলে দ্রুত চালের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এমবিএইচ/এমজেএফ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।