ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রবীণবান্ধব সমাজ গড়তে প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
প্রবীণবান্ধব সমাজ গড়তে প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধ প্রবীণবান্ধব সমাজ গড়তে প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধ- ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: প্রবীণদের পরিবার, সমাজ ও দেশের বোঝা মনে না করে যথাযথ সম্মান, নিরাপত্তা, প্রয়োজনীয় সেবা, শুশ্রূষা দিয়ে আপন করে নেওয়ার মনোভাব তৈরি করতে পারলেই গড়ে উঠবে প্রবীণবান্ধব সমাজ। আর এজন্য প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা।

বুধবার (২৬ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত দেন। হেলপ এইজ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাতীয় প্রেসক্লাব যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।


 
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেমিনার উপ-কমিটির আহ্বায়ক দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম আতিকুর রহমান, সমাজকর্মী স্বপ্না রেজা ও  জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন প্রমুখ।
 
অনুষ্ঠানে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন ‘হেলপ এইজ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর রাবেয়া সুলতানা লাইজু।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম আতিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম অন্য যে কোনো দেশের গণমাধ্যমের চেয়ে একটু বেশিই প্রবীণবান্ধব। দেশের যে কোনো সার্ভিসের ক্ষেত্রে বয়স ৬১/৬২ বছর হলেই অবসরে পাঠানো হয়, কিন্তু সাংবাদিকদের বয়স যত বাড়ে, তাদের সম্মান, পদমযার্দাও ততো বাড়ে।
 
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ প্রবীণ আছেন। এদের যথাযথ সম্মান, মযার্দা, নিরাপত্তা ও সেবা দেওয়ার দায়িত্ব সকলের। বয়স হয়ে গেলেই মানুষ সমাজের বোঝা হয়ে যায়, অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়-এমন ভাবনা ভেতর থেকে দূর করতে হবে। কারণ, আজ যারা কর্মক্ষম আছেন, আগামীতে তাদেরকেও বার্ধক্যে পৌঁছাতে হবে।
 
বর্তমান সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রবীণবান্ধব কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা হয়তো অনেকেই জানি না এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দলের লোকজনও জানেন না, তিনি প্রবীণদের জন্য কত বড় কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে যারা সরকার গঠন করবেন, তারা যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথ অনুসরণ করেন।  
 
বুড়ো বয়সে ব্যয়ভার বহনের জন্য সঞ্চয় করারও পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, বার্ধক্য আপনার দিকে ধেয়ে আসছে। প্লিজ প্রস্তুতি নিন। বয়স্ক মানুষের দায়ভার কেউ নিতে চায় না। সঞ্চয় থাকলে, বার্ধক্যে সেটা কাজে লাগবে।
 
অবশ্য সমাজকর্মী স্বপ্না রেজা বলেন, বার্ধক্যের জন্য অর্থ সঞ্চয় করব, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের সন্তানদের শেখাতে হবে, যারা তোমাদের লালন-পালন করছে, তারা বার্ধক্যে পৌঁছালে তাদের দেখাশোনার ভার তোমাদের। তাদেরকে মানবিক মূল্যবোধের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। তাদের কাছ থেকে মানবিক মূল্যবোধ আমরা আশা করতেই পারি।
 
তিনি বলেন, সামাজিক সম্পর্ক হচ্ছে সমাজ রক্ষার হাতিয়ার। সম্পর্ক যদি না থাকে সমাজ ভেঙে যাবে। সমাজকে টেকানো যাবে না। সুতরাং যেভাবেই চিন্তা করি না কেন, জাগ্রত মানবিক মূল্যবোধই পারে প্রবীণবান্ধব সমাজ গড়তে।
 
সোহরাব হাসান বলেন, বাংলাদেশ সরকার ৩৪ লাখ মানুষকে বয়স্কভাতা দিচ্ছে। এটা ভাল উদ্যোগ। কিন্তু কেবল এই উদ্যোগের মধ্য দিয়েই প্রবীণবান্ধব সমাজ গঠন সম্ভব হবে না। এর জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
 
তিনি বলেন, প্রবীণরা বাইরের কেউ নন-- এই ধারণাটা তরুণদের ভেতর থেকেই আসতে হবে। আর অর্থ থাকলেই যে প্রবীণরা নিরাপদে থাকতে পারবেন, সেটাও খুব জোর দিয়ে বলা যায় না। অর্থের কারণেই বেশ কয়েকজন প্রবীণকে প্রাণ হারাতে দেখেছি। সুতরাং সব কিছুর সঙ্গে প্রবীণদের নিরাপত্তার দিকটিও দেখতে হবে। আর এ দায়িত্বটি নিতে হবে রাষ্ট্র বা সরকারকে।

উন্মুক্ত আলোচনায় বেশ কয়েকজন তরুণ সাংবাদিকও অংশ নেন। তারাও প্রবীণবান্ধব সমাজ গঠনে মানবিক মূলবোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এজেড/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad