ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ! একদিকে ফুটপাতের দোকান বন্ধ, আবার জমে উঠেছে পিঠার দোকান

ঢাকা: টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় রাজধানীতে বেশিরভাগ মানুষ ভোগান্তিতে থাকলেও কেউ কেউ আছে মহা আনন্দে।টানা বর্ষণে রাজধানীর ফুটপাত কেন্দ্রিক বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। আবার ফুটপাতেরই কোনো কোনো ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক লাভ এখন সর্বোচ্চ।

বুধবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে পসরা সাজিয়ে বসতে পারছেন না ফুটপাতের ছোট দোকানিরা। বৃষ্টির কারণে গত তিনদিন ধরেই দোকান বন্ধ করে রেখেছেন তারা।

তবে দোকান বন্ধ থাকার কারণে তাদের মুখ ভার থাকলেও জমে উঠেছে ফুটপাতে রেইনকোর্ট বিক্রি ও ছাতা মেরামতকারীদের ব্যবসা। আর অসময়েও চলতে দেখা গেছে পিঠাপুলির দোকান।

সাধারণত পিঠার দোকানগুলো চলতে দেখা যায় শীতকালে। কারণ পিঠা গরম গরম না খেলে স্বাদটা মনঃপুত হয় না।   কিন্তু টানা বৃষ্টিপাতের কারণে গত কয়েকদিনে ঢাকার তাপমাত্রাও কম ছিল। আর এ কারণেই পিঠার দোকানে গরম গরম ভাপা, চিতই পিঠা খেতে দেখা যাচ্ছে অনেককেই।

মিরপুরে অবস্থিত শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল ফটকের বিপরীত পাশে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে  পিঠা বিক্রি করছেন জুবাইদা বেগম। বাংলানিউজকে তিনি জানান, ‘গরমকালে পিঠা বানাই না। রুটি আর ডালভাজি বানাই। শীতকালে মানুষ গরম গরম পিঠা খাইতে চায়। কিন্তু কয়দিনে বৃষ্টিতে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগে তাই মানুষে পিঠা খাইতে চায়। মাইনসে আইসা কইছে খালা পিঠা বানান। বানাইতাছি, বিক্রিও হইতাছে। ’

বৃষ্টিতে একই দৃশ্য দেখা গেছে উত্তরা, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং এলাকাতেও। এদিকে ফুটপাত কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত। অনেকের ঘরের চুলায় জ্বলছে না আগুন। কোনমতে দিনানিপাত করছেন তারা। মিরপুর-১০ এ রাস্তার পাশে ভ্যানে করে জুতা ও ছোটদের জামাকাপড় বিক্রি করেন সোহেল। ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছেন বৃষ্টি থামবে সে আশায়।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে অনেক টাকার পাইকারি মালামাল কিনছি। তাই হাতেও টাকা নাই। বাসায় বউ পোলাপানরে ঠিকমত খাওয়াইতে পারতেছি না। গতকাল আমরা একবেলা খাইয়া আছিলাম। এখন দাঁড়ায়া আছি। বৃষ্টি থামলেই দোকান খুলুম।    

উত্তরা ও মিরপুর এলাকার প্রায় সব ফুটপাতের দোকানগুলো বন্ধ থাকার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে জলাবদ্ধতা।  দোকান খোলা থাকলেও দোকানের সামনে পানি জমে থাকার কারণে ক্রেতারা আসছেন না।

এদিকে ময়লা পানিতে পা ডুবিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে অফিসে উপস্থিত হতেই হচ্ছে চাকরিজীবীদের। উপায় নেই তাদের। তবে স্কুলগুলো যেন অঘোষিত ছুটিতে আছে। অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের যেতে দিচ্ছেন না স্কুলগুলোতে। সে কারণে আনন্দেই আছে শিক্ষার্থীরা।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এহসান এবং ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নোহা। স্কুলে যাচ্ছে না গত তিনদিন ধরে। তাদের বাবা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, আমাকে অফিসে যেতেই হবে। কিছু করার নেই। কিন্তু জরিমানা হবে জেনেও আমার বাচ্চাদের আমি স্কুলে যেতে দিচ্ছি না। কারণ ঢাকার রাস্তাঘাট পুরোটাই এখন নোংরা পানির নীচে। ওখানে নামলে চর্মরোগ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।

এ বিষয়ে কদমতলা পূর্ব বাসাবো হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মো. সাইফুল আলম বাংলানিউজকে জানান, স্কুলে অনুপস্থিতি থাকলেও অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি। আমাদের আজকের স্কুল শাখার উপস্থিতির হার ছিল শতকরা ৬০ ভাগ। অবশ্য স্বাভাবিক সময়ে স্কুলে উপস্থিতি ১০০ ভাগ থাকে। এছাড়া কলেজ শাখায় উপস্থিতির হার নেমে এসেছে শতকরা ২০ ভাগে। যেটা স্বাভাবিকভাবে ৯০ ভাগ থাকে। আবার আসতে গিয়ে পুরো ভিজে গিয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়:১৬০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এমএএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।