ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ভাড়াটিয়া উঠছে ‘সেই জাহাজ বাড়িতে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
ভাড়াটিয়া উঠছে ‘সেই জাহাজ বাড়িতে’ অভিযানের দিন তোলা জাহার বাড়ির ছবি

ঢাকা: রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নং রোডের ৫৩ নং বাড়িটির নাম ‘তাজ মঞ্জিল’। নির্মাণশৈলীর ভিন্নতার কারণে এলাকার সবার কাছে এটি ‘জাহাজ বাড়ি’ নামেই পরিচিত। ঠিক এক বছর আগে আরেকটি ভিন্ন কারণে বাড়িটি পরিচিত হয়ে ওঠে দেশবাসীর কাছে।

গত বছরের ২৬ জুলাই এ বাড়িটির ৫ম তলায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। একই মাসে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্যতম গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরপরই এ আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

যেখানে ‘স্ট্রম-২৬’ নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সফল অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত ও একজনকে আটক করা হয়।

ওই ঘটনার পর ভবনের সব বাসিন্দাদের চলে যাওয়া এবং নতুন ভাড়াটিয়া না আসায় এটি অনেকটা ‘ভুতুড়ে বাড়ি’ হিসেবেই পড়ে থাকে। বছর পেরিয়ে গেলেও ভিন্নভাবে পরিচিতি পাওয়া বাড়িটির কথা শুনলে আঁতকে ওঠেন স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সরেজমিন জানা যায়, গত মাস থেকে বাড়িটির ক্ষতে প্রলেপ লাগতে শুরু করেছে। প্রায় এক বছর ধরে ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে পড়ে থাকা ছয় তলা ভবনটিতে এরইমধ্যে ছয়টি ভাড়াটিয়া পরিবার উঠেছে। বাড়িওয়ালাও উঠবেন সামনের মাসে।

মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদের অবর্তমানে বাড়িটি দেখাশোনা করছেন নিচতলার ভাড়াটিয়া শাহনাজ। তিনি বলেন, বাড়িটি পুলিশের কাছ থেকে অনেক আগেই বুঝে পেলেও বাড়ির মালিক এতোদিন ভাড়া দেননি। তিন মাস ধরে তিনি ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গত জুন মাসে এ বাড়িতে ওঠা শাহনাজ জানান, নিচতলায় দু’টি ও তৃতীয় তলার চারটি ইউনিটে এরইমধ্যে ভাড়াটিয়া উঠেছেন। তৃতীয় তলার আরেকটি ইউনিটে আগামী মাস থেকে আরেকটি পরিবার উঠবে।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় তলায় মালিক তার পরিবার নিয়ে থাকতেন। কিন্তু ঐ ঘটনার পর তারা জুরাইনে আছেন। তবে সামনের মাসে মালিকের পরিবারও দ্বিতীয় তলায় উঠবেন। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলাগুলো এখনো ভাড়া হয়নি।

নিচতলার আরেকটি ইউনিটের ভাড়াটিয়া সাথী আক্তার এ বাসায় উঠেছেন দুই দিন আগে। গত বছর জঙ্গি আস্তানার কথা তুলতেই তিনি বলেন, সে সময় আমরা এ বাসায় ছিলাম না। তবে এ এলাকারই আরেকটি বাসায় ছিলাম। ওই ঘটনা নিয়ে এখন আমাদের মধ্যে কোনো ভয় বা আতঙ্ক নেই।

তিনি জানান, আগামী দুই একদিনের মধ্যে বাড়িতে মিলাদ পড়াবেন মালিক। তারপর পরিবারসহ আগের মতো দ্বিতীয় তলায় উঠবেন।

বাড়িটির সামনেই ৪৮/১ নং ভবনের নিচতলায় ‘নিউ শাহীন স্টোর’ নামে একটি মুদি দোকান রয়েছে। দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, বাড়িটি এতোদিন ভূতুড়ে বাড়ির মতো পড়েছিল। ভাড়াটিয়াদের কেউ আসতে চায় আবার কেউ চায় না। গত মাস থেকে কয়েকটা ফ্যামিলি উঠেছে। বাসায় লোকজন উঠে গেলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ভবনের নিচতলায় দোকান আর পাঁচতলায় বসবাস করেন শাহীন। গত বছর অভিযানের সময় তিনি এ বাসাতেই ছিলেন। সেদিনের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঝরাতে পুলিশ রেইড দিলে ৫ম তলায় জঙ্গি আস্তানা পায়। পুলিশ বাড়িটি সারারাত ঘেরাও করে রাখে ও থেমে থেমে গুলির শব্দ হয়। পরে সকালে পুলিশের অভিযানে ৯ জঙ্গি মারা যায়। ভয়াভয় সেই রাতে আমরা যারা আশেপাশে ছিলাম, কেমন একটা উৎকণ্ঠার মধ্যে কেটেছে, যা কখনোই ভোলার নয়।

এদিকে ওই অভিযানের পর রাজধানীর মিরপুর থানায় ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, তামিম আহম্মেদ চৌধুরী, ইকবাল, রিপন, খালিদ, মামুন, সারোয়ার জাহান মানিক, জুনায়েদ খান, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজ। তাদের মধ্যে রিগ্যান এ মামলাতে গ্রেফতার রয়েছেন। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন তামিম ও সারোয়ার। বাকি সাতজন পলাতক।

এছাড়া মামলায় সালাউদ্দিন কামরান, ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রউফ প্রধান, শায়েখ আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর, আহমেদ আজওয়ার ইমতিয়াজ ওরফে অনি নামে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের মধ্যে রিগ্যান, আবদুর রউফ ও সালাউদ্দিন কামরান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর দেশবাসী বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। কিন্তু কল্যাণপুরের অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছে এবং মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তাই এ অভিযান ছিল আমাদের টার্নিং পয়েন্ট।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০-১২ দিন আগে কল্যাণপুরে নিহত ৯ জঙ্গির ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেয়েছি। এদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। যারা পলাতক আছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে, যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে আমরা চার্জশিট দেবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।