ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শর্ত না মানলে বিমানের বন্ড লাইসেন্স বাতিল

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
শর্ত না মানলে বিমানের বন্ড লাইসেন্স বাতিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

ঢাকা: বন্ড লাইসেন্সের শর্ত না মানলে বিমানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআর জানায়, বন্ড লাইসেন্স ছাড়া দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ব্যবসা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গত বছর কাস্টমসের চাপে বন্ড লাইসেন্স নিলেও সম্প্রতি বিমানের পক্ষ থেকে বন্ড লাইসেন্স নেওয়ার সময় যে শর্ত দেওয়া হয়েছিলো তা মানতে পারবে না বলে ঢাকা কাস্টমস হাউসকে চিঠি দিয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর বলছে, বিমান যদি বন্ড লাইসেন্সের শর্ত না মানে তাহলে তাদের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আর বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হলে একচেটিয়াভাবে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে বিমানকে।


এনবিআর সূত্রে জানা যায়, একচেটিয়া প্রভাব খাঁটিয়ে বছরের পর বছর কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ব্যবসা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে কাস্টমসের চাপে পড়ে শর্ত সাপেক্ষে ২০১৬ সালের ৪ মে বন্ড লাইসেন্স নিতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি। আর বন্ড লাইসেন্স নেওয়ার ১ বছর যেতে না যেতেই চলতি মাসের ৬ তারিখে বিমানের পক্ষ থেকে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, কাস্টমসের দেওয়া কোনো শর্ত তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। ফলে বিমানের গুদাম থেকে আমদানিকৃত কোনো পণ্য হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে সেটার দায়-দায়িত্ব কিংবা গ্রাহকের কোনো পণ্য হারিয়ে গেলে তারও কোনো হিসাব দিতে পারবে না।   এমনকি কাস্টমস কোনো তথ্য চাইলেও তারা দিতে পারবে না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ.এম. মোসাদ্দিক আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়, কার্গোর ওয়্যারহাউসটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক মালামাল শেডের বাইরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষে শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব ‍নয়।


বন্ড লাইসেন্স দেওয়ার সময় বিমানকে যে শর্ত দেওয়া হয় তা হলো, কাস্টমস আইন ও অন্যান্য সহযোগি আইন সমূহের আলোকে আমদানিকৃত ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ, গুদামের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, গুদামে সিসিটিভি স্থাপন, গুদামের ভেতরে পণ্য সুশৃঙ্খলভাবে সংরক্ষণ, পণ্য চুরি হওয়া এবং বিনষ্ঠ হওয়া প্রতিরোধ করা, পণ্য চুরি বা নষ্ট হলে তার ক্ষতিপূরণ ও শুল্ককরাদি পরিশোধে বিমানকে দায়বদ্ধ করা, পণ্য সংরক্ষণের হিসাব যথাযথভাবে করা, অডিটের প্রয়োজনে কাস্টমকে পণ্য সরবরাহ, নিলামযোগ্য পণ্য ও সাধারণ পণ্য পৃথকভাবে সংরক্ষণসহ কিছু শর্তাবলী দিয়ে বিমানকে ব্যবসা করতে বন্ড লাইসেন্স দেয় ঢাকা কাস্টমস হাউস।


এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি) লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শর্ত সাপেক্ষে বিমান বাংলাদেশকে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়। বন্ড লাইসেন্স নেবে অথচ লাইসেন্সের শর্ত মানবে না সেটা হতে পারে না। বিমান যদি লাইসেন্সের শর্ত না মানে তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কেননা ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই তাদেরকে লাইসেন্সের শর্ত মানতে হবে।


এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ.এম.মোসাদ্দিক আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখন মিটিংয়ে আছি। আপনার কিছু জানার থাকলে পরে ফোন দেবেন। পরবর্তীতে একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।


বন্ড লাইসেন্সের কোনো শর্ত বিমান না মানলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী বিমানকে বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাস্টমসকে দেওয়া বিমান বাংলাদেশের চিঠিটি আমি এখনো পাইনি। তবে বন্ড লাইসেন্সের শর্ত না মানলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কেননা কার্গো থেকে পণ্য চুরি ও জবাব দিহিতার আলোকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সেখানে লাইসেন্সের শর্ত না মানলে লাইসেন্স থাকার যুক্তিকথা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬,২০১৭
এসজে/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।