ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মুই উপেষ আছম তাতে সমেস্যা নাই, চিন্তে মোর অন্য...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
মুই উপেষ আছম তাতে সমেস্যা নাই, চিন্তে মোর অন্য... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাইবান্ধা: বানের পানিত মোর (আমার) সবকিছু তছনছ হইছে। ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে। কোনো মতে বউ-ছোল আর গরু দু’খেন নিয়ে বাঁধত (বাঁধ) আশ্রয় নিছনু।

এহন (এখন) বানের পানি সরি ঘর জাগি উঠছে। তয়, হামরা মানুষ-গরু সবাই উপেষ।

মুই উপেষ আছম তাতে সমেস্যা নাই। চিন্তে করম খালি গরু দু’খেন নিয়ে।

বানের পানিত খড়ের ডিব্বা ভাসি গেছে। দুইদিন আগত (আগে) একশ’ ট্যাহা (টাকা) নৌকে ভাড়া দিয়ে উজেন থাকি ঘাস কাটি আনছম। এহন নৌকা ভাড়ার ট্যাহা নাই, গরুর ঘাসও নাই। গরু দু’খনে মোর মতোন উপেষ সকাল থেইকে।

হামরাতো (আমরা) রিলিপ চাইনে। রিলিপের বদলে যদিল গবাদি পশুর খাবার দিতো হামরা খুশি হতেম। কিন্তু রিলিপ তো দূরের কথা হামার কেউ কোনো উদ্দিসও (খোঁজ খবর) করে নাই।

এভাবেই বন্যা পরবর্তী দুর্ভোগের কথা জানালেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উড়িয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম (৩৮)।

তিনি জানান, নদী তীরে বাড়ি হওয়ায় বন্যার পানিতে সব ডুবে গেছে। এখন ঘর মেরামত করার মতো টাকা নেই তার। এছাড়া বন্যায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তার পরিবারের সবাই।

একই গ্রামের মনির উদ্দিন জানান,  বন্যার পানিতে ১৫ দিন আটকা থাকলেও কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি তিনি। এছাড়া পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বানভাসীদের অধিকাংশই চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি ওষুধ না পেয়ে অর্থাভাবে শরীরের ঘা শুকাতে বানভাসিরা ব্যবহার করছেন কেরোসিন তেল, হলুদ ও সরিষার তেল। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএদিকে, গাইবান্ধার চার উপজেলার ১৯৪টি গ্রামের ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ আবাদি জমি থেকে পানি নেমে গেছে। অনেকেই নতুন করে ঘরবাড়ি মেরামত করছেন।

বন্যায় গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ পনিবন্দি হয়ে পড়েন। বন্যায় পাঁচশ’ হেক্টর জমির ফসল, পুকুরের মাছ, গাছপালা, স্কুল-কলেজ ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। এছাড়া পাঁচ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি বিলিন হয়েছে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তায়।

এদিকে, দুর্গত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। সেই সঙ্গে এসব এলাকায় রয়েছে মানুষ ও গবাদিপশুর খাদ্য সংকট। বেশ কয়েকদিন নলকূপ পানিতে ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবও দেখা দিয়েছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি আর্থিক সহায়তাও দরকার।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হালিম টয়লেষ্ট বলেন, বন্যা দুর্গতদের চিকিৎসা সেবায় কাজ করছে মেডিকেল টিম।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।