নীতি নির্ধারকদের চরম অদক্ষতা, স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা আর নগর পরিকল্পনাবিদদের অপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞের ফলে বর্ষা মৌসুমের নিয়মিত বর্ষণেই নগরবাসীর দুর্ভোগ আজ চরমে।
শ্রাবণের দশম দিন মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিরতিহীন বারিধারায় যে বাড়তি দুর্ভোগ, তার জন্য প্রকৃতিকে খুব বেশি দায়ি করার সুযোগ কই? ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুঁড়ে রাখা রাস্তায় জমে যাওয়া জলের দায়িত্ব তো আর ঈশ্বর নেবে না!
মূল সড়কের ড্রেনেজ স্লাব উল্টে রাখা হয়েছে সেই মার্চে।
উল্লেখিত এই দৃশ্য রাজধানীর অভিজাত এলাকা বলে খ্যাত গুলশান-১ নম্বর সার্কেলের সামান্য একটু দূরে বাড্ডা লিং রোড এবং এর আশপাশের আবাসিকের।
মূল সড়ক থেকে ডানে-বামে যে দিকেই যান না কেন-দৃশ্য প্রায় একই। গত কয়েক দিনের বর্ষণে দুর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) এ মাত্রা ‘মাত্রাতিরিক্তে’ গিয়ে ঠেকে।
কয়েক দিনের বিরামহীন টানা বর্ষণ! সপ্তার মাঝামাঝি কর্মদিবস। ঘরে বসে থাকার জো নেই। তাই মঙ্গলবার সকালে (২৫ জুলাই) বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বের হতে হয়েছে সবাইকে। আর পড়তে হয়েছে অনিবার্য দুর্ভোগে।
গুলশান-১ গুদারাঘাট থেকে ওয়াটার বাস যোগে এফডিসি কর্নার হয়ে গন্তব্য ছিল হোটেল সোনারগাঁও। এই নাতিদীর্ঘ যাত্রায় বৈরি আবহাওয়ায় চোখে পড়ে দুর্ভোগের নানা চিত্র!
গুদারাঘাটে ওয়াটার বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা অধিকাংশ যাত্রীর শরীর ছিল গলে পড়া মেঘে ভেজা। হাতে টিপ দেওয়া ছাতা থাকলেও হালকা বাতাসে উল্টে যাওয়ায় বৃষ্টি থেকে খুব একটা রক্ষা পায়নি শরীর।
খোঁড়াখুঁড়ির শিকার ক্ষত-বিক্ষত সড়কে জমে থাকা জল জুতা-স্যান্ডেলের ধাক্কায় কারো কারো কোমর ছুঁয়ে পিঠ পযর্ন্ত পৌঁছেছে। দুয়েকজনকে আবার দেখা গেল ছাতা-ছাড়াই বেরিয়েছেন এই বর্ষার বারি ধারার মধ্যে। কী কারণে ছাতা ছাড়া বের হওয়া, তা বোঝা গেল না।
ওয়াটার বাসে উঠেও ভোগান্তির শেষ নেই। বেশিরভাগ চেয়ারে বৃষ্টির পানি জমে আছে। বাসকর্মিরা ত্রিপল ঝুলিয়ে দিলেও দমকা হাওয়ায় সিটে এসে জমেছে বৃষ্টির পানি। বার বার মুছেও কুল পেল না বাসকর্মিরা। উপায়ান্ত না দেখে ভেজা সিটেই আসন নিতে হলো সবাইকে।
১৫ মিনিটের নৌযাত্রা শেষে এফডিসি কর্নারে নেমে ফের ভোগান্তি। বৃষ্টির সঙ্গে এবার দমকা হাওয়া। হাল্কা ছাতা তো বটেই, শক্ত-পোক্ত ছাতাগুলোও ছুটতে চায় ঊর্ধ্বপানে। শূন্যে নিয়ে যেতে চায় ছাতাওয়ালাকেও।
বৃষ্টির দিনে আরেক বিড়ম্বনা রিকশা ভাড়ায়। রাজধানীর সব এলাকায়ই প্রায় একই সমস্যা দেখা গেলেও এফডিসি কর্নার থেকে হোটেল সোনারগাঁও পযর্ন্ত এ বিড়ম্বনা যেনো সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। নিয়মিত ভাড়া ২০ টাকার জায়গায় ‘দুর্ভোগের’ ভাড়া ৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গেলে যান, না গেলে না যান- রিকশাওয়ালার তাকে কিছু যায় আসে না।
তবে বিজ্ঞজনরা বলছেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি নামবে-এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি নিয়ে হা-পিত্যেশ করে লাভ নেই। বরং সহজভাবে মেনে নিতে পারলেই ভাল। প্রয়োজন শুধু মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি।
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে বের হওয়া। এতে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ভেতরে অস্থিরতা তৈরি হবে না। মোবাইল ও প্রয়োজনীয় ছোট কাগজপত্র রক্ষায় পকেটে ছোট পলিথিন রাখতে হবে। আর ছাতার তো কোনো বিকল্প নেই।
এমন প্রস্তুতি থাকলেই শ্রাবণের বারিধারায় ভিজতে ভিজতে অথবা বৃষ্টির রিম-ঝিম, টিপ-টিপ শব্দ শুনতে শুনতে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারবেন। দুর্ভোগকে আর দুর্ভোগ মনে হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
এজেড/জেডএম
** খোঁড়াখুঁড়ি ও বৃষ্টিতে যানজট চরমে