ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অন্ধত্ব দমাতে পারেনি বদরগঞ্জের সালিহুরকে

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
অন্ধত্ব দমাতে পারেনি বদরগঞ্জের সালিহুরকে সালিহুরের পরীক্ষায় খাতায় লিখে দিচ্ছে অন্য এক জুনিয়র এক ছাত্র। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: সালিহুর রহমান (২০) একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বর্তমানে তিনি ডিগ্রি পরীক্ষার্থী। তার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের ফয়েজের পাড়া গ্রামে দিনমজুর আ. রউফের দুই সন্তানের মধ্যে তিনি ছোট। এ যবুককে দেখতে শ্যামলা মাঝারি গড়নের।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ এতোটাই ছিল যে দিনমজুর বাবা বাধ্য হন তাকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে।

পরীক্ষা শেষে সালিহুরের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে লেখাপড়া করতে আমার খুব ভালো লাগতো।

কিন্তু আমার কপালটাই খারাপ আমি জন্মান্ধ। বাবা-মা আমাকে নিয়ে খুবই চিন্তা করতো। আমি নিজেও বুঝতাম দরিদ্র পিতা-মাতা আমাকে নিয়ে খুবই চিন্তা করছেন। পাশের গ্রামের এক স্কুল শিক্ষকের পরামর্শে আমার দরিদ্র বাবা আমাকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করে দেন।

পরে সেখানে থেকে ব্রেইল (হাতের স্পর্শ) পদ্ধতিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। বর্তমানে ডিগ্রি পরীক্ষা দিচ্ছি।

সালিহুর আরও বলেন, পরীক্ষা চলাকালে আমার জুনিয়র শিক্ষার্থী আমাকে পরীক্ষার সময় সহযোগিতা করতো। আমি তাকে প্রশ্নের উত্তর বলে দিতাম সে আমার খাতায় লিখে দিতো। বর্তমানে ডিগ্রি পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই হচ্ছে।

লেখাপড়া শিখে কী হতে চান জানতে চাইলে সালিহুর বলেন, মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

কালুপাড়া ইউনিয়নের ফয়েজের পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সালিহুর অত্যন্ত ভালো ছেলে। প্রচন্ড আগ্রহ ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি যে মানুষকে সামনের দিকে নিয়ে যায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সালিহুর তার বড় প্রমাণ। আমাদের গ্রামের সুস্থ শরীরের অসংখ্য ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে না। অথচ সালিহুর ডিগ্রি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার বিশ্বাস তিনি একদিন ভালো কিছু করবেন।
 
বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাংলানিউকে জানান, একই গ্রামে আমাদের বাড়ি। সালিহুর অত্যন্ত ভালো ছেলে। আমি আশ্চর্য অন্ধত্ব তাকে দমাতে পারেনি। আমার বিশ্বাস তিনি এগিয়ে যাবেই।    

বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিমলেন্দু সরকার বাংলানিউজকে জানান, ডিগ্রি পরীক্ষার্থী সালিহুর অনেক ভালো ছেলে। মাঝে মাঝে তার পরীক্ষার হলে গিয়ে যতটুকু বুঝতে পেরেছি এ যুবক পরীক্ষা ভালো দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ