কিন্তু প্রতারক চক্রের কবলে পড়ে আতিকুরকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়েছে। এমনকি প্রায় বন্দিশালায় পর্যন্ত জীবন কাটাতে হয়েছে।
বিদেশ যাওয়ার জন্য জমি বিক্রির পাশাপাশি যে ঋণ করেছিলেন, সেই সাড়ে ৪ লাখ টাকা শোধ করতেই এখন তাকে কখনো ভ্যান চালাতে হচ্ছে, কখনো চালাতে হচ্ছে রিকশা, আবার কখনো কাজ করতে হচ্ছে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে।
আতিকুরের মতো আরজু হোসেনও ওই একই প্রতারক চক্রের কবলে পড়ে এখন ঋণের ঘানি টানতে দিনমজুরি করছেন। স্বপ্ন দেখানোর ছলে তাদের মতো অনেককেই এভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আশুলিয়ার নলাম এলাকার আদম ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন ও শেফালী দম্পতির বিরুদ্ধে। টাঙ্গাইলের আতিকুর ও আশুলিয়ার আরজুর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী শেফালী নলামের যুবকদের ফুঁসলিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছেন। তাদের দু’জনের কাছ থেকেই ওই দম্পতি নিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ করে ৯ লাখ টাকা।
দু’জনেই অভিযোগ করেন, তাদের কাতারে পাঠানোর নামে এতো বিপুল অংকের অর্থ নিলেও পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভ্রমণ ভিসায় অনুন্নত দেশ ওমানে। সেখানে কাজ তো মিলছিলই না, খাবারও দেওয়া হচ্ছিল না তাদের।
আতিকুর ও আরজু বলেন, দেশে ফিরে আলাউদ্দিনের কাছে আমানত ফিরে পেতে চাইলে কৌশলে তাদের পাসপোর্ট রেখে দেন তিনি। উল্টো হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। থানার বারান্দায় ঘুরে এলেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তারা এখন চুপসে গেছেন। ঋণের টাকা শোধে আশুলিয়ায় কখনো ভ্যান চালক কখনো দিনমজুরের কাছ করছেন।
আতিকুর রহমান বলেন, পরীক্ষার আগে আমার এক পরিচিত ব্যক্তি বিদেশ যেতে বলেন। অভাবের কথা চিন্তা করে পরিবার বিষয়টিতে সায় দেয়। পরে পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই ওই পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে আশুলিয়ার দালাল আলাউদ্দিনের বাড়িতে যাই। কাতার যাওয়ার উদ্দেশে বাড়িতে বসেই জমি বিক্রি ও ঋণ করে নেওয়া সাড়ে ৪ লাখ টাকা তার কাছে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাকে কাতারে না দিয়ে ভ্রমণ ভিসায় পাঠানো হয় ওমানে। সেখানে গিয়ে কোনো কাজ না পেয়ে সারাদিন ঘরের ভেতর পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। যে স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ যাওয়া, তা না হয়ে উল্টো জীবন নিয়ে সংটে পড়তে হয়। পরে বাধ্য হয়েই কোনোরকম জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে হয়। দেশে ফিরে আলাউদ্দিনের কাছে গেলে উল্টো পাসপোর্ট রেখে দেন তিনি।
আরজু হোসেন বলেন, আলাউদ্দিনের স্ত্রী শেফালী আমাকে কাতার নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সেখানে একটি ভাল কাজ দিয়ে দেবেন আশ্বাস দিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নেন আমার কাছ থেকে। কিন্তু কাতারের কথা বললেও পাঠান ওমানে। ওই দেশে দীর্ঘ দিন কষ্ট করে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এখন রিকশা চালিয়ে ঋণের টাকার পরিশোধ করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেফালী বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু ভুল হয়েছে। তবে আমরা প্রস্তাব করেছি, তাদের পুনরায় অন্য কোনো রাষ্ট্রে পাঠাবো, তাই তাদের পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের বেগ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, প্রতারক চক্রের বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
এইচএ/