বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী জেসিকা। সকাল থেকে ঘরের দরজায় মায়ের অপেক্ষায় বসে আছে সে।
রোববার (২৩ জুলাই) সকালে প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমার মেয়ে কর্মস্থল রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা করে। তখনও আমার নাতনি (জেসিকা) ঘুম থেকে ওঠেনি। মেয়ে শুধু আমাকে বলে যায়, জেসিকাকে দেখে রাখতে। আমার মেয়ে হয়তো বেঁচে নেই। আমি ওকে কী জবাব দেবো?
এভাবেই বিলাপ করছিলেন মুন্নীর মা নীলিমা বড়ুয়া। আদরের সন্তানের এমন খবরে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি।
চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপে কর্মরত নিখোঁজ মুন্নীর স্বামী অমর বড়ুয়া জানান, ২২ জুলাই রাতে মুন্নির সঙ্গে শেষ কথা হয় মোবাইল ফোনে। বৃহস্পতিবার অফিস শেষে রুমা থেকে বান্দরবানের বাসায় ফেরার কথা ছিল মুন্নীর।
তিনি বলেন, দায়িত্বের প্রতি খুবই আন্তরিক আমার স্ত্রী। তাই প্রতিকূল অবস্থা জেনেও কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল সে।
মুন্নি বড়ুয়ার ভাই ছোটন বড়ুয়া জানান, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়ার আশায় ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করেছিলেন তারা। কিন্তু মুন্নির পরনের জামার ছেঁড়া কাপড় ও হাতের ব্যাগটি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি।
বান্দরবান সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে দৌলিয়ান পাড়ায় সড়ক ভাঙা থাকায় যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে সড়কের ওই অংশ পার হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই পাশের একটি পাহাড়ের মাটি ধসে তাদের ওপর পড়ে। এসময় বেশ কয়েকজন যাত্রী মাটির নিচে চাপা পড়েন। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী ও রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা এসে আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এরপর পর পাওয়া যায় চিংমেহ্লা নামে এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন মুন্নী বড়ুয়া, রুমা কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা গৌতম নন্দী, পোস্ট মাস্টার রবিউল ইসলাম এবং সিংমেচিং মারমা।
শুধু মুন্নির পরিবারই নয় নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। রুমা সদরের মংশৈ প্রু কারবারী পাড়ার মংশৈ প্রু কারবারীর দুই মেয়ে সিমোচিং মারমা ও চিমেহ্লা মারমা বান্দরবান থেকে বাসে করে রুমায় যাচ্ছিলেন। পথে পাহাড় ধসে পড়লে নিখোঁজ হন তারা। পরে চিমেহ্লা মারমার মরদেহ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ রয়েছে ছোট বোন সিমোচিং মারমা।
এদিকে, ঘটনার পর বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে দিনভর উদ্ধার অভিযান চললেও রোববার সন্ধ্যায় উদ্ধার কাজ স্থগিত করে প্রশাসন। সোমবার (২৪ জুলাই) সকাল ৭টা থেকে পুনরায় নিখোঁজদের খোঁজে অভিযান শুরু হয়। তবে বৃষ্টির জন্যে উদ্ধার কাজে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানায় দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা।
সোমবার সকালে অভিযানে যোগ দেন পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, লক্ষ্মীপদ দাসসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বৃষ্টির মধ্যেও দিনভর উদ্ধার অভিযান অব্যাহত ছিল। সেনাবাহিনী, রেডক্রিসেন্ট কর্মী, পুলিশ ও স্থানীয় জনতা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে। তবে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
রুমা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শরীফুল হক বাংলানিউজকে জানান, নিহত চিমেহ্লা মারমার পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
এসআই