রাজধানীর অধিকাংশ প্রধান সড়কই অসংখ্য ছোট বড় খানা-খন্দে পরিপূর্ণ। মূল সড়ক থেকে শুরু করে গলিপথ সব জায়গাতেই দুর্ভোগ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে আজ ঢাকায় ২৪ মিমি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ারও কোনো লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আশঙ্কা ভোগান্তি আরও বাড়ার।
ফার্মগেট থেকে মিরপুর হয়ে উত্তরা আসার পথে দেখা যায় গাড়িগুলো চলছে থেমে থেমে। বিজয়সরণি পার হবার পরই জ্যামে আটকে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ ধরে। কারণ ঐ এলাকা থেকেই শুরু হয়েছে মেট্রোরেলের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি। বৃষ্টির কারণে গর্তগুলো আবার পরিণত হয়েছে খালে।
আবার ফুটপাতগুলো দখল হয়েছে খননকৃত মাটি দিয়ে। বৃষ্টিতে তা নরম কাদামাটিতে রূপান্তরিত হওয়ায় হাঁটারও উপায় নেই ফুটপাত ধরে। একই অবস্থা মিরপুর-১০, কালশী, পূরবী, মিরপুর-১১ পুরো রাস্তা জুড়েই। সড়কের প্রায় পুরোটা জুড়ে ছোট ছোট খানাখন্দ। যেখানে জমে আছে ময়লা কাদাপানি। গাড়িগুলো যাবার সাথে সাথেই সে পানির ছিটা গায়ে উঠছে পথচারীদের।
মিরপুরবাসী ড্যানিশ গ্রুপে কর্মরত নাঈম তরফদার বলেন, আজ অফিসে যাবার সময় পর পর দু’বার ড্রেস পরিবর্তন করতে বাসায় ফিরে যেতে হয়েছে। কারণ গাড়িগুলো এসে কাদাপানি ছিটিয়ে যাচ্ছে। ঐ অবস্থায় তো অফিসে যাওয়া যায় না।
প্রেসক্লাব এলাকা থেকে বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মানসুরা চামেলী জানান, প্রেসক্লাব টু ফার্মগেট পুরো রাস্তায় দীর্ঘ যানজট। হাইকোর্ট, পল্টন, মৎস্যভবন, শাহবাগ, কাওরান বাজার ও ফার্মগেট প্রতিটি মোড়ে গাড়ির দীর্ঘ জট। ফলে একটু পর পর পরিবহনগুলো স্টার্ট বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। দীর্ঘ সময় জ্যামে বসে যাত্রীদের হাঁসফাঁস করতেও দেখা যায়। এর মধ্যে ভোগান্তির যানজটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবহন সংকট। শাহবাগ ও ফার্মগেট মোড়ে শত শত মানুষকে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। একটা গাড়ি আসলে তার মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে যাত্রীরা। অনেকেই পরিবহন না পেয়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটেই গন্তব্য স্থলে রওনা দিচ্ছেন।
বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট শামীম খান গুলিস্তান থেকে জানান, গুলিস্তান থেকে রামপুরা রুটে তীব্র যানজট গাড়ি চলছে থেমে থেমে ৷ পুরানা পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা পার হতে দেড় ঘণ্টার উপরে লেগে যাচ্ছে। এদিকে এই এলাকার জলাবদ্ধতার কারণে এই যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ৷ জিপিও, পল্টন মোড়, কাকরাইলে রাস্তার পাশে শত শত মানুষ বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে যানবাহনের অপেক্ষায় ৷
বাংলানিউজের সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আবাদুজ্জামান শিমুল জানান, রামপুরা-বনশ্রী ঢোকার মুখ থেকে শুরু করে ডেমরা পর্যন্ত রাস্তার মাঝে মাঝে বড় বড় গর্ত। ওই গর্তে পানি জমে থাকে। দেখে মনে হয় ছোট ছোট খাল। এটাকে বিপদজনক নয় মহাবিপদজনক রাস্তা বলতে হবে। বাসা থেকে বের হলেই হতে হয় দুর্ভোগের শিকার।
বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শেখ জাহিদুজ্জামান কাকরাইল থেকে জানান, বৃষ্টি ও যানজটে পল্টন,কাকরাইল, ফকিরাপুল, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও মালিবাগে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কাকরাইল মোড়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন রাশেদুল হাসান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঘণ্টাখানেক হলো গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। আবার বৃষ্টিতে ভিজেও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।
কদমতলী থেকে বাংলানিউজের সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট দেলোয়ার হোসেন বাদল জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কদমতলী থানার জুরাইন পোস্তগোলা এলাকার প্রায় সব রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে দিন পার করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্কুল গামী ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যেতে হচ্ছে হাঁটু পর্যন্ত পানি মাড়িয়ে। রাস্তাগুলো সংস্কার না করা এবং ড্রেনেজ লাইনগুলো পরিষ্কার না করার ফলে এই পানি আটকে থাকছে মাসের পর মাস। । বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে যাচ্ছে। ফলে রান্না খাওয়া দাওয়াও বন্ধ। পানি জমে থাকার কারণে চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রায় ঘরে ঘরে। এলাকাবাসী জানায়, এইরকম বৃষ্টি হলে আর যদি পানি জমে থাকে তা হলে অচিরেই এ এলাকা বসবাসের অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে।
বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট খুররম জামান জানান, গুলশান,বনানী, বাড্ডা, নতুন বাজারসহ প্রগতি সরণি জুড়ে ব্যাপক যানজট। বিশেষ করে কায়িক শ্রমিক এবং কাজ শেষে ঘরমুখো মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। দিনভর বৃষ্টি ও অস্বস্তিকর গরম। মানুষকে কাকভিজে হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে মোড়ে মোড়ে। বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়ক ও নিচু এলাকায় পানি জমে গেছে।
বিশ্বরোড থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শরীফুল ইসলাম জুয়েল জানান, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, শাহবাগমুখী সড়কে তীব্র যানজটে পথচলা প্রায় থেমে গেছে। এদিকে আকাশ মেঘে ঢেকে থাকায় দিনের বেলাতেই মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নেমে এসেছে রাজধানীতে। এছাড়া বৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন বাস স্টপেজ এ পরিবহন সংকটে ঘরে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে মানুষ। বৃষ্টি, যানজট আর গণপরিবহন সংকটে চরম ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ।
বেসরকারি চাকরিজীবি গ্লেন এ্যালেক্স বাংলানিউজকে বলেন, ১ ঘণ্টা ধরে বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির জন্য বনানীতে অপেক্ষা করছি। অবশেষে গাড়িতে উঠলাম। এখন ফামর্গেট যেতে আর কত ঘণ্টা লাগবে জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
এমএএম/আরআই