ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নাদিয়ার সংগ্রামের গল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
নাদিয়ার সংগ্রামের গল্প ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: জন্মগতভাবেই হাত-পা বাঁকানো। ঠিক মতো চলাফেরা করাই দায়। হুইল চেয়ার তার নিত্যসঙ্গী। বেঁচে থাকাই যেখানে কষ্টের, সেখানে লেখাপড়া করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন অনেকটা বাহুল্যই বলা চলে। কিন্তু নাদিয়ার অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে সব প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে।

বলছিলাম ফেনী শহরতলীর ‘জয়নাল হাজারী কলেজ’র মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া পারভীন কুলসুমের কথা।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সে ২.৭৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও অর্জিত ফলাফলে বেশ উচ্ছ্বসিত নাদিয়া। কারণ সে জানে, কতো কষ্ট করতে হয়েছে তাকে।

অনুভূতি জানতে চাইলে নাদিয়া বলেন, আইসিটি পরীক্ষাটা খারাপ হয়েছিল, তাই বেশ শঙ্কায় ছিলাম। এতো ভয় আর কখনও পাইনি। আবার ফলাফল হাতে পেয়ে যে খুশি হয়েছি, এতো আনন্দও আগে কখনো পাইনি।

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর নাদিয়া জানান, তার এ পথচলা তখনই সহজ হবে, যখন সরকার ও সম‍াজ তার পাশে দাঁড়াবে।
 
কাতার প্রবাসী নুর আহম্মেদ ও ফরিদা ইয়াসমিনের বড় মেয়ে নাদিয়া জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান সে। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় নাদিয়া।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমশহরের মধুপুর গ্রামের নাদিয়ার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, দুই হাত ও পায়ে সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেও কারো বোঝা হয়ে থাকেনি তার মেয়ে। অনেকবার ঢাকার পঙ্গু হাসাপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও কোনও সমাধান হয়নি। এরপর নাদিয়ার বাবা তাকে কাতারে নিয়ে যান। সেখানেও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা কর‍ানো হয়। কিন্তু তাতেও কোনও সমাধান হয়নি।

ফরিদা ইয়াসমিনের ধারণা, আরও উন্নত কোনো দেশে ভালো ডাক্তার দেখাতে পারলে নাদিয়া ভালো হয়ে উঠতে পারে।

তিনি জানান, ছোট বেলা হাত-পা নাড়াতে পারতো না নাদিয়া। কিন্তু কলম ধরার ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ ছিল তার। বড় হতে হতে পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহটা আরও বেড়ে যায়। নাদিয়ার এ আগ্রহ দেখেই বাড়ির পাশের স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হয়। এরপর কৃতিত্বের সঙ্গে সে মধুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনীতে পাস করে। পর জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩ পায়। ২০১৫ সালে মধুপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৮৩ পেয়ে পাস করে।

অসাধারণ মানসিক শক্তির অধিকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী নাদিয়া শুধু লেখাপড়া নয়, কম্পিউটার চালানো, ছবি আঁকাসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কাজেও সে পারদর্শী।  

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে নাদিয়া জানান, ফেনী সরকারি কলেজ থেকে বাংলা অথবা ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স করতে চান তিনি। এরপর স্বপ্নের বিসিএস! নিজের যোগ্যতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা- বোঝা হয়ে বেঁচে থাকা নয়।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে কিশোরী নাদিয়া বলেন, সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্র যদি সব প্রতিবন্ধীর ব্যাপারে যত্নশীল হয়, তাহলে একটি শিশুও দেশের বোঝা হয়ে থাকবে না।
 
নাদিয়ার মা বলেন, তার চিকিৎসার পেছনে এ পর্যন্ত প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কাছে অনেক আগেই প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করেছি- কিন্তু তার কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

** শারীরিক প্রতিবন্ধী নাদিয়ার সংগ্রামের গল্প
 
বাংলাদেশ সময় ০২০২ ঘণ্টা ২৪ জুলাই ২০১৭
এসএইচডি/এজেড/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad