ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভুঁই কুমড়ায় জীবন চলে আজগর আলীর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
ভুঁই কুমড়ায় জীবন চলে আজগর আলীর ভুঁই কুমড়ায় জীবন চলে আজগর আলীর

নাটোর: বাস্তুভিটা আর মাত্র ১০ কাঠা জমিই সম্বল কৃষক আজগর আলীর। আগে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সাত থেকে আট বিঘা জমি ছিল তার।

কিন্তু মামলা-মোকদ্দমায় অনেক আগেই সব খুইয়েছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সেনভাগ লক্ষ্মিকোল গ্রামের এই কৃষক। এখন ওইটুকু জমিতে ফসল ফলিয়ে জুটছে পরিবারের জন্য দুই বেলা আহার, মিটছে দৈনন্দিন চাহিদা।

প্রায় ৩০ বছর ধরে একই জমিতে ভুঁই কুমড়া (চাল কুমড়া বা জালি নামে পরিচিত) চাষ করে আর্থিকভাবে তিনি হয়েছেন স্বাবলম্বী, হয়ে উঠেছেন একজন সফল কৃষক। পাশাপাশি গবাদি পশু পালন করেন তিনি। একই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ভুঁই কুমড়া চাষের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে আউশ ধান, পেঁয়াজ, পটল ও ঢেঁড়স চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

তিনি জমি কিনতে না পারলেও ফসল থেকেই বছরজুড়ে ঘরের খাবার ও দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সঞ্চয় করতে পারছেন। এক ছেলেকে বিদেশেও পাঠিয়েছেন ফসল ফলিয়ে।

আজগর আলী বাংলানিউজকে বলেন, ৩০ বছর ধরে একই জমিতে ভুঁই কুমড়ার চাষাবাদ করে আসছেন। এই ফসল চাষাবাদ খুব সহজ ও খরচ কম এবং লাভজনক।

ভুঁই কুমড়ায় জীবন চলে আজগর আলীর

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ১০ কাঠা জমিতে আষাঢ়-শ্রাবন মাসের দিকে আউশের চারা রোপণ করি। অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে ধান ঘরে তুলে সেখানে ভুঁই কুমড়ার চারা রোপণ করি। ফুল আসার আগ পর্যন্ত দুই- আড়াই মাস একই জমিতে বড়তি পেঁয়াজও চাষ করি।

চৈত্র মাসের শুরুর দিকে ভুঁই কুমড়ায় ফুল আসে, আর শেষের দিকে ফল ধরে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানা তিন মাস কুমড়া পাওয়া যায়।

প্রতিটি ভুঁই কুমড়া প্রথম দিকে বিক্রি হয় ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকায়। পরে বাজারের চাহিদা কম হলে কম দামেও বিক্রি করতে হয়। এতে প্রতি বছর ওই জমিতে উৎপাদিত ভুঁই কুমড়া বিক্রি করে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। আর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার পেঁয়াজ চারা বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকার ভুঁই কুমড়া বিক্রি করেছি। আরো ছয়/সাত হাজার টাকার বিক্রি হবে।

ভুঁই কুমড়া বাজারজাত করতে কোনো সমস্যা হয় না। পাইকারি সবজি ক্রেতারাই এসে তার জমি থেকে ভুঁই কুমড়া কিনে নিয়ে যান।

আজগর আলী জানান, ১০ কাঠা জমিতে বীজ, চারা রোপণ, সেচ, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক মিলে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদে শুধুমাত্র ভুঁই কুমড়াতেই লাভ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা।

এছাড়া জমির আইল দিয়ে ঢেঁড়স, মরিচ গাছ লাগিয়ে বাড়তি ফসল উৎপাদন করেন তিনি। জমি থেকে পাওয়া বর্ষালী ধান দিয়ে চার/পাঁচ মাস ভালোই সংসার চলে।

বছরের বাকি সময় উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে সংসার চালাতে কোনো কষ্ট হয় না। বরং খরচ করেও বাড়তি টাকা জমিয়ে গরু-ছাগল পালন করেন তিনি। মেয়ের বিয়ে দেয়া, পাকা বাড়ি করা আর ছেলেকে বিদেশে পাঠানো, সবই করেছেন এ টাকায়।

তিনি বলেন, ভুঁই কুমড়া চাষ করে সফল হয়েছি। একজন কৃষকের জমি কম থাকলেও কঠোর পরিশ্রম আর সঠিক পরিকল্পনা ও লক্ষ্য থাকলে সফলতা আসবেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।