ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঋণ থেকে মুক্তি পেলেন সেই বৃদ্ধ প্রাণ হরি দাস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
ঋণ থেকে মুক্তি পেলেন সেই বৃদ্ধ প্রাণ হরি দাস প্রাণ হরি দাস

লক্ষ্মীপুর: ৮০ বছরের সেই বৃদ্ধ প্রাণ হরি দাস অবশেষে ব্যাংক ঋণের দায় থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ঋণের নামে ব্যাংক কর্মকর্তাদের তার বষয়স্ক ভাতা থেকে টাকা কেটে রাখার আর সুযোগ নেই। তিনি এখন থেকে বয়স্কভাতার পুরো টাকাই বাড়ি নিয়ে ফিরতে পারবেন। হোপ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ঋণ মুক্তির জন্য ওই বৃদ্ধের পাশে দাঁড়ায়।

রোববার (২৩ জুলাই) দুপুরে প্রাণ হরি দাস লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার কৃষি ব্যাংক তোরাবগঞ্জ শাখার ঋণের দায় থেকে মুক্ত হন। এ সময় ব্যাংকে উপস্থিত ছিলেন কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা।

‘৫ হাজার টাকার কৃষি ঋণ ২২ হাজারেও শেষ হয়নি’ শিরোনামে গত বুধবার (১৯ জুলাই) বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হোপ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রাণ হরি দাসের ঋণ পরিশোধে এগিয়ে আসে; বৃদ্ধকে ঋণের দায় থেকে মুক্ত করে। এ সময় তাকে আরও কিছু টাকা চিকিৎসা ও হাত খরচের জন্য দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

সংগঠনের বাংলাদেশের সমন্বয়কারী সৈয়দ সাইফুল আলম শোভান বাংলানিউজকে জানান, সংবাদ প্রকাশের পর একই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জিন ইসলাম ওই বৃদ্ধের অবশিষ্ট ঋণের দুই হাজার এবং চিকিৎসা ও হাতখরচের জন্য আরও তিন হাজার টাকা প্রদান করেন।  

এদিকে, ইউএনও মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা ও ব্যাংক ব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম এক হাজার করে আরও দুই হাজার টাকা বৃদ্ধকে দেন।

ঋণ মুক্তির পর কেমন লাগছে প্রাণ হরির কাছে জানতে চাইলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণ থেকে আমি এ জীবনে মুক্তি পাবো কখনো কল্পনা করিনি। ইউএনও স্যার ও সাংবাদিকের সহযোগিতায় ঋণ থেকে মুক্ত হয়েছি।
ই্উএনও এবং ব্যংক কর্মকর্তার সঙ্গে প্রাণ হরি দাসঋণ শোধের পর বাকি যে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে সে টাকা কী করবেন জানতে চাইলে প্রাণ হরি দাস জানান, এলাকার মুদি দোকানের কিছু দেনা পরিশোধ করবেন। বাকি টাকা দিয়ে ওষুধ আর চাল কিনবেন প্রাণ হরি দাস।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, বৃদ্ধ প্রাণ হরি দাস ঋণ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বিষয়টি সত্যি আনন্দের। বাংলানিউজের কল্যাণে হোপ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন তার সেবায় এগিয়ে এসেছে। তাদের জন্য শুভকামনা।

কৃষি ব্যাংক তোরাবগঞ্জ শাখার ব্যাবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম বৃদ্ধের ঋণ পরিশোধ হয়েছে বলে জানান এবং ঋণ মুক্তির টাকার রসিদ প্রদান করেন।  

প্রাণ হরি দাস কমলনগর উপজেলা চর কাদিরা ইউনিয়নের মৃত কামিনী কুমার দাসের ছেলে। ১৯৯৮ সালে কৃষি ব্যাংক তোরাবগঞ্জ শাখা থেকে তিনি ৫ হাজার টাকা কৃষি ঋণ নেন। গত ৮ বছর ধরে ওই ঋণ পরিশোধের নামে ভাতা উত্তোলনের দিন উত্তোলিত বয়স্কভাতার টাকা থেকে ঋণের টাকা আদায় করতো ব্যাংক। এভাবে ভাতা থেকে ২২ হাজার টাকা নিলেও আরও টাকা দাবি করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। অভাব-অসুখের কথা জানালেও গত ৭ জুলাই ব্যাংকে বয়স্কভাতার ৩ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকা কেটে নেন কর্মকর্তারা।  

গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে অসুস্থ বৃদ্ধ কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সেবা কক্ষে গেলে ইউএনও মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কাছে বিষয়টি জানতে চান।

আগের নিউজটি এখানে পড়ুন:
৫ হাজার টাকার কৃষি ঋণ ২২ হাজারেও শেষ হয়নি

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।