ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুদকের ভুলে নিরপরাধ ব্যক্তি কারাগারে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
দুদকের ভুলে নিরপরাধ ব্যক্তি কারাগারে!

ঢাকা: অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ। যেখানে অনিয়ম রোধে দুদক থাকবে কঠোর অবস্থানে, সেখানে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়েই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দুদকের দায়ের করা মামলায় এবার নিরপরাধ এক ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়েছে। আর সেই মামলায় বর্তমানে জেলে রয়েছেন চট্টগ্রামের সেই ব্যবসায়ী। গত ১০ জুলাই জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু দুদক বলছে, তাদের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেননা দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, দুদক তদন্ত করে দেখেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা (অবসরপ্রাপ্ত) মো. সাইফুর রহমান, সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক(দুদকের তথ্যমতে) সোহরাব হোসেন ও কিংশিপ শিপিং এজেন্সির মালিক মির্জা মো. আহসানুজ্জামান পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে ২০১০ সালের ২৪ মার্চ সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল আমদানিকৃত পণ্য খালাসের মাধ্যমে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬৫ টাকা ৬৩ পয়সা কাস্টমস শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন। আর আমদানি করা পণ্য ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি খালাস নেন।

যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শুধু তাই নয়, সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক সোহরাব হোসেন ১৪ হাজার ৭৯৪ কেজি ‘অ্যাসরটেড সফট ড্রিংকস’ আমদানি করেন। আমদানি পণ্যের আইজিএম ঘোষণার সময়ও অ্যাসরটেড সফট্ ড্রিংকস উল্লেখ ছিলো। কিন্তু পণ্য খালাসের সময় কাস্টমস কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মিলে অ্যামোনিয়াম সালফেট ঘোষণা দিয়ে মাত্র ৭৩৮ টাকা ৯৯ পয়সা কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করে পণ্য খালাস নেন। যার জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের বন্দর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নাম্বার ২৭। মামলার এজাহারে সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ঠিকানা দেখানো হয়েছে ২/১ নয়াপল্টন। আর প্রতিষ্ঠানটি মালিক দেখানো হয়েছে সোহরাব হোসেনকে।

এদিকে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নতুন তথ্য। সেটি হচ্ছে, দুদকের দায়ের করা মামলার ২ নম্বর আসামি সোহরাব হোসেন সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক নন। তিনি চট্টগ্রামের ‘এনএস ট্রেডিং করপোরেশনে’র মালিক। এছাড়া দুদকের মামলায় দেখানো হয়েছে, সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ঠিকানা ২/১ নয়াপল্টন। অথচ এনএস ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবসায়িক ঠিকানা ৫২২, শেখ মুজিব রোড (৪র্থ তলা আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম)। এছাড়া সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে এনএস ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক সোহরাব হোসেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তিনি কোম্পানিটির মালিকও নন।

শুধু তাই নয়, সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের আওতাভুক্ত। আর সোহরাব হোসেন পরিচালিত এনএস ট্রেডিং করপোরেশন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অন্তর্ভুক্ত। ফলে দুদক ভুলবশত এনএস ট্রেডিং করপোরেশন মালিক সোহরাব হোসেনকে সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক দেখিয়ে আসামি করেছে। যার ফলে নিরপরাধ ব্যক্তি বর্তমানে হাজতবাস করছেন।

এ বিষয়ে সোহরাব হোসেনের ভাই ইসমাইল হোসেন নিউটন বাংলানিউজকে বলেন, আমার বড় ভাই সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক নন। তিনি এনএস ট্রেডিং করপোরেশন মালিক। বিষয়টি সমাধানে আমাদের পক্ষ থেকে ১১ মে দক্ষিণ কমিশনারেটের (ঢাকা) কমিশনার বরাবর চিঠি দেয়া হয়। সেই চিঠিতে সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে এনএস ট্রেডিং করপোরেশনের মালিকের কোনো সম্পর্ক নেই, এমনকি তিনি ওই কোম্পানির মালিক নয় বলেও উল্লেখ করা হয়। পরে আবার চলতি বছরের ৬ জুলাই এনএস ট্রেডিং করপোরেশনের পক্ষ থেকে ডাকযোগে দুদক চেয়ারম্যান, এনবিআর চেয়ারম্যান ও কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই চিঠিরও কোনো সদুত্তর দেয়নি কোনো পক্ষ।

এ বিষয়ে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে জানি না। কিংবা কোনো চিঠিও পাইনি। ফলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, তিনি যদি সান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক না হয়ে থাকেন তাহলে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা নয়। আর এতো বড় ভুল কিভাবে হয় সেটা দেখার বিষয়। বিষয়টি আমি জেনেছি, এটার প্রকৃত ঘটনা কি সেটা আমি খতিয়ে দেখব। তিনি নিরপরাধ হয়ে থাকলে অবশ্যই দুদক তার পক্ষে থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
এসজে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।