ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফের কর্মচঞ্চল চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
ফের কর্মচঞ্চল চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন ফের কর্মচঞ্চল চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনটি। দীর্ঘদিন এ বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি ছিল খুবই নগণ্য। ভারতে রুপির বিপরীতে ডলারের দরপতন ঘটার কারণে দীর্ঘদিন এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি ছিল না। বর্তমানে বেশ কিছু কোম্পানির জিনিসপত্র ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। তবে মাছ রপ্তানি এখনো বন্ধই রয়েছে। একারণে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। একটা ব্রীজ ও রাস্তা ভেঙ্গে যাবার কারণেওও ভোন্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকরা। গরু আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব কমে গেছে অনেক গুণ।

চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে সহজেই পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যায় বলে ব্যবসায়ীরা ওই স্থলবন্দরটি ব্যবহার করে। কিন্তু ওই রাস্তায় মনু নদীর উপরে নির্মিত ব্রিজের উত্তরের অংশের নিচের পাটাতনের মাটি সরে গেলে সড়ক বিভাগ কিছু বস্তা ও গাছ গেড়ে আটকানোর চেষ্টা করছে।

তবে এটা পর্যাপ্ত না। রাস্তার বিভিন্ন অংশে গর্ত দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পণ্য ওঠানো-নামানোর জায়গাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখান দিয়ে আরএফএল সামগ্রী, বেঙ্গলের প্লাস্টিক সামগ্রী, ময়মনসিংহ অ্যাগ্রো গ্রুপের সামগ্রী, আলট্রাটেক সিমেন্ট,প্রিমিয়ার সিমেন্ট,সেভেনরিং সিমেন্ট,হোলসিম সিমেন্ট রপ্তানি হয়।   ফের কর্মচঞ্চল চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমরপ্তানি সামগ্রী ডিউটি ফ্রি হলেও প্রতিটি চালানে ১৫০ টাকাতে অ্যাডভান্স ইনকামটেক্স(এআইটি) হিসেবে ১% করে দিতে হয় রাজস্ব এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে ২২৫ টাকা করে রাজস্ব দিতে হয়। তবে প্রতি চালানে ২৫ হাজারের উপরে হলে অতিরিক্ত ১% করে রাজস্ব দিতে হয়। ভারত থেকে আমদানি হয় ভাঙ্গা কাঁচ, সাতকারা, লেবু, আদা ইত্যাদি।

এবন্দর দিয়ে গরু আমদানি হতো প্রচুর পসংখ্যায়। কিন্তু গত তিন বছরে গুরু আসাটা একেবারেই কমে গেছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মাত্র ২৭টি গরু এসেছে। ২০১৬ সালের মার্চ থেকে গরু আমদানি বন্ধ রয়েছে,তবে কিছুদিনের মধ্যে তা আবার চালু হতে পারে।  

২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। আর রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭৪ টাকা। শুধু জুন মাসেই আয় হয়েছে ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আয় হয়েছে ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৭৫৭ টাকা।

সরেজমিন চাতলাপুর চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, সিমেন্ট ও প্লাস্টিক-বোঝাই বেশকিছু গাড়ি মাল খালাসের অপেক্ষায়। কিন্তু মালামাল খালাসের জায়গাটি কর্দমাক্ত হয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে গাড়িচালক ও শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। অনেক শ্রমিক সিমেন্ট লোড-আনলোড করতে গিয়ে পড়েও যাচ্ছেন।
ফের কর্মচঞ্চল চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমগাড়ি চালকরা অভিযোগ করেন, তারা অনেক দূর থেকে সিমেন্ট ও প্লাস্টিকের সামগ্রী নিয়ে আসেন। কখনো কখনো এখানে এসে ২-৩ দিন থাকতে হয়্। কিন্তু এখানে কোনও থাকা বা খাবার জায়গা নেই। খাবার আনতে হলে তিনশত টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে শমসেরনগরে যেতে হয়।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলেন, তারা সরকারকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিচ্ছেন,কিন্তু শুল্ক স্টেশনের কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে না। পণ্য ওঠা-নামা করাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, এশুল্ক স্টেশন দিয়ে মাছ রপ্তানি হলে তারা খুবই লাভবান হতেন। কিন্তু আগরতলার দিক দিয়ে ভারতে মাছে ফরমালিন পাওয়াতে আর তারা মাছ নিচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ফরমালিন বাংলাদেশের মাছের মধ্যে পাওয়া যায়নি। সেটা বরং পাওয়া গেছে তাদের দেশের (ভারতের) রুই মাছে। তবুও তারা মাছ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর কারণে এদেশের মাছ রপ্তানিকারকদের পড়তে হয়েছে ক্ষতির মুখে।

চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনে কাজ করেন ২০ জন শ্রমিক। মালামাল লোড-আনলোড করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। সেখানকার শ্রমিক সর্দার মো: হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অনেকদিন মালামালের যাতায়াত বন্ধ ছিল। এখন কিছু মালামাল আমদানি-রপ্তানি আবার শুরু হয়েছে। এর ফলে কিছুটা হলেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন তারা।

ঢাকার মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা গাড়িচালক মো: জাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, শমসেরনগর থেকে-চাতলাপুর পর্যন্ত রাস্তায় প্রচুর গর্ত। একটি ব্রিজ তো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, অনেক জায়গায় রাস্তার পাশটা ভেঙে গেছে। যেখানে তারা মালামাল নামাচ্ছেন সেখানে গাড়ি রাখার মতো জায়গা নেই। মাটি কাদা হয়ে দেবে গেছে। অতিদ্রুত এগুলো মেরামত না করা হলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গাড়িচালক রানা বাংলানিউজকে বলেন, এখানে আসার পর তাদের ২-৩ দিন বসে থাকতে হয়। কিন্তু এখানে থাকার ও খাওয়ার হোটেল না থাকায় খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। এখান থেকে শমসেরনগর অনেকদূর। তবু খাবার আনার জন্য সেখানে যেতে হয়। অনেক খষ্টে আনা হলেও সে খাবার দাবার আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না। পথেই নষ্ট হয়ে যায়। আবার কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সেও অনেক সময় লাগে।

সিঅ্যন্ডএফ এজন্ট সলিল শেখর দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, তারা লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার রাস্তা ও মালামাল আনলোড পয়েন্টের কোনও উন্নতি সাধন করছেন না। তিনি দ্রুত রাস্তা মেরামত সহ আনলোড পয়েন্টের উন্নতি সাধনের জোর দাবি জানান।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও মাছ রপ্তানিকারক ছয়ফুর রহমান রিমন বাংলানিউজকে জানান, গত ৭-৮ মাস ধরে মাছ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে তাদের অনেক লোকসান হচ্ছে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবরে দরখাস্ত দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চ মহল থেকে এবিষয়ে কথা বললে আবারও মাছ রপ্তানি শুরু করা সম্ভব হবে বলেই তাদের বিশ্বাস। এবিষয়ে কুলাউড়া মৎস্য কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

এবিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: সুলতান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, গত মার্চ মাসে কৈলাশহরে বাংলাদেশের ১২ জন ও ভারতের ৮ জনকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মৎস্য রপ্তানি নিয়ে কথা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি তিনি ভারতের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তারা  আশা করছেন শিগগিরই মৎস্য রপ্তানি চালু হবে।

এব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে কাস্টমর্সের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন যাতে করে পুনরায় মাছ রপ্তানি চালু করা যায়।

রাস্তার বেহাল দশার বিষয়ে কথা বললে সড়ক ও জনপথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিন্টু দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, তিনি আগামীকাল থেকেই ভাঙ্গা বা গর্ত হয়ে যাওয়া রাস্তায় ইট দিয়ে কাজ শুরু করবেন এবং বৃষ্টি উঠে গেলে রাস্তাটি কার্পেটিংয়ের ব্যবস্থা নেবেন। মনু নদীর উপর ব্রিজটিতে তাৎক্ষণিক কিছু কাজ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কাজ করানো হবে।    
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, ২২ জুলাই ২০১৭
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।