ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জাতীয় অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে কাপ্তাই হ্রদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
জাতীয় অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে কাপ্তাই হ্রদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাঙ্গামাটি: এশিয়া মহাদেশের মানব সৃষ্ট সর্ববৃহৎ মিঠা পানির হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৬৩-৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বাঁধ দেওয়ার ফলে মানব সৃষ্ট এ হ্রদের সৃষ্টি হয়।

কিন্তু হ্রদ থেকে বিদুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সৃষ্টি হয় মৎস্য উৎপাদনের বিশাল বাণিজ্যিক খাত। হৃদের মৎস্য খাত বর্তমানে জেলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে।

একটা সময় হ্রদ থেকে ৭৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। সে সময় বাজারে বিক্রি করা হতো বোয়াল, চিতল, রুই, কাতলা, কালিঘনিয়া, সাদাঘনিয়া, তেলাপিয়া, মহাল, কারপু, টুইট্টা, বাঁডা, মলা-ঢেলা, বড় আকারের চাপিলা, বকরি, ফলাই, বাচকুট্টা, ফাইশ্যা, পাবদা, পুঁটি, বাইন, পুঁইয়া, টেংরা, টাকি, গজাল, সিং, শৈল, কুইচ্ছা, মাগুর, ছোট ইছা, সরপুঁটি, আইল, কেচকি, বাইলাসহ উল্লেখযোগ্য প্রজাতির মাছ।

বিগত দু’ দশক ধরে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে মাছের সঠিক প্রজনন, ডিম ছাড়ার সময় অসাধু ব্যবসায়ী ও কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মাছ শিকার করে গোপনে বাজারজাত করায় ধীরে ধীরে মাছের ওজন এবং উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলোর অধিকাংশ বিলুপ্ত হয়েছে।

মৎস্য গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮-৮৯ সালের দিকে প্রথমে মৎস্য প্রজাতি বিলুপ্তির প্রকাশ পায়। প্রায় দু’দশক পর দেখা যাচ্ছে, হ্রদ থেকে প্রায় ৩৭ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সীলন, দেশি সরপুঁটি, ঘাউরা,বাঘাইড়, মোহিনী বাটা, দেশি পাংগাস। বর্তমানে আরো অনেক সুস্বাদু মাছ এখন বিলুপ্তির পথে এবং দুই প্রজাতির কচ্ছপ অনেক আগে বিলুপ্তি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়।

সচেতন বিজ্ঞ মহলের অভিযোগ, কাপ্তাই  হ্রদ নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। প্রজনন ও ডিম ছাড়ার সময় মাছ শিকার নিষেধ থাকলেও অসৎ ব্যবসায়ীরা রাতের আঁধারে মাছ শিকার করে সড়ক পথেই তা পাচার করে। তাছাড়া অবৈধ দখলবাজদের কারণে হ্রদের পরিধি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। পয়:নিষ্কাশনের কারণে বাড়ছে দূষণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের মৎস্য ব্যবসায়ীরা ক্ষোভের সঙ্গে অভিযোগ করেন, অতীতে মৎস্য কর্পোরেশন অনভিজ্ঞদের ব্যবসার লাইসেন্স দিয়েছিলো। একজন মৎস্য ব্যবসায়ীকে সরকারি লাইসেন্স পেতে হলে কি কি থাকা দরকার তার প্রয়োজনও মনে করেননি কর্পোরেশন। ফলে অনভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা মানেননি কোন প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম কানুন।

জেলা মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর কমান্ডার (নৌবাহিনী) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে মৎস্য আহরিত হয়েছে ৮৮১৩ মেট্রিক টন এবং রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকারও বেশি। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে আহরিত মৎস্য ৮৬৪৪.৮০ মেট্রিক টন এবং রাজস্ব আদায় ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকারও বেশি।

২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে মৎস্য আহরিত হয়েছে ৯৫৮৮.৫৫ মেট্রিক টন এবং রাজস্ব আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৫৪ লাখ টাকারও বেশি। সর্বশেষ ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে মৎস্য আহরিত হয়েছে ৯৯৭৫ মেট্রিক টন এবং রাজস্ব আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

আসাদুজ্জামান আরো বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে কাপ্তাই হ্রদ। এজন্য সরকারকে হ্রদ নিয়ে কাজের পরিধি বাড়াতে হবে।

মাছের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তিন মাসের জন্য হ্রদে সব রকম মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। সেইসঙ্গে হ্রদের যে স্থানে মাছ ডিম ছাড়ে এমন চ্যানেলেগুলোতে কোস্ট গার্ড নিয়োগ করা হয় এবং এই স্থানগুলোকে মাছের অভয়াশ্রম জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মৎস্য সম্পদকে রক্ষা ও দূষণ মুক্ত রাখার জন্য হ্রদকে ড্রেজিংয়ের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ দখল থেকে হ্রদ যাতে মুক্ত থাকে সেদিকে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, ২২ জুলাই, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।