ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেল টেংরা মাছ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেল টেংরা মাছ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টলের অ্যাকুরিয়ামে চাষ করা টেংরা মাছের পোনা। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: ‘মাছে ভাতে বাঙালি’- প্রবাদ বাক্যটির উদ্ভব যে সকল মাছের জন্য, সেগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে আসে টেংরা মাছের নাম। বহুল পরিচিত মিঠা পানির মাছটি খুবই সুস্বাদু, মানবদেহের জন্য উপকারী অণুপুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এবং কাটা কম হওয়ায় সকলের কাছেই প্রিয়।

এক সময় মাছটির প্রাচুর্য থাকলেও বর্তমানে তা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে টেংরার জাত উদ্ভাবন করে প্রায় বিলুপ্তির পর্যায়ে চলে যাওয়া মাছটিকে রক্ষায় সমর্থ হয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর মিঠাপানি উপ-কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

       

মাছের প্রজাতিটি সংরক্ষণে ২০১৪ সাল থেকে গবেষণা করে এ সফলতা পেয়েছেন উপ-কেন্দ্রটির ৩ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ ১৭ জন কর্মচারী। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পোনা উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পাদনও করতে সমর্থ হয়েছেন তারা।

চলমান জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের মেলার স্টলে প্রদর্শন করছেন টেংরার নতুন জাতটি।

শনিবার (২২ জুলাই) মৎস্য অধিদফতরের এ মেলায় ঘুরে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টলের অ্যাকুরিয়ামে দেখা মেলে চাষ করা টেংরা মাছের পোনাগুলো।

বাজারে ছোট টেংরা মাছের দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত, বড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দরে। বাজারে চাহিদা বেশি ও সরবরাহ কম থাকায় দামের এ উচ্চহার বলে জানান ক্রেতা-বিক্রেতারা।

বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া  ট্যাংরা মাছ।  ছবি: জি এম মুজিবুরকিন্তু সবার প্রিয় মাছটির দাম এখন কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিন গবেষক ড. খোন্দকার রশীদুল ইসলাম, মালিহা হোসেন মৌ এবং শওকত আহমেদ।

মাছটির চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গবেষক  ড. খোন্দকার রশীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ‘এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত টেংরা মাছের প্রজননকাল। এ সময়ে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্রুড ও পুকুর তৈরি করা হয়। প্রজনন মৌসুমের আগেই অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে সুস্থ ও সবল ৮-১০ গ্রাম ওজনের টেংরা মাছ সংগ্রহ করা হয়’।

‘৮-১০ শতাংশ আয়তন ও ১ মিটার গভীরতা সম্পন্ন পুকুর নির্বাচন করে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগের ৫ দিন পর ১১০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭৫ গ্রাম টিএসপি ও ৪ কেজি গোবর ব্যবহার করে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। প্রজনন মৌসুমের আগে পরিপক্ব পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে ২:১ অনুপাতে মসৃন জর্জেট হাপায় স্তানান্তর করা হয়। এবং এখানেই মাছকে হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়।

হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগের ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ছাড়ে ও ডিম থেকে রেণু পোনা তৈরি করে ১০ দিনের মধ্যে নার্সারি পুকুরে ছাড়া হয়। ৫৫-৬০ দিন পর নার্সারি পুকুর থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করা যায়’।

বিলুপ্তপ্রায় টেংরা মাছ সংরক্ষণে অবদান রাখায় বুধবার (১৯ জুলাই) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গবেষক দলটিকে রৌপ্য পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

** টেংরার জাত উদ্ভাবন, ফিরবে বিপন্ন অন্য দেশি মাছও

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
এমএএম/এএসআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।