ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফখরুলের দুর্নীতিতে হতবাক দুদক!

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
ফখরুলের দুর্নীতিতে হতবাক দুদক! এ কে এম ফখরুল ইসলাম (ডানে)

ঢাকা: নৌপরিবহন অধিদপ্তরের গ্রেফতার হওয়া প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলামের দুর্নীতির শেষ নেই। কয়েক বছরেই নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গিয়েছেন তিনি।

দুই দিনের রিমান্ডে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে ফখরুল ইসলাম কীভাবে এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যে রীতিমতো হতবাক হচ্ছেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা।

 
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের নির্ভরশীল একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার সময় দুদকের হাতে গ্রেফতার হন ফখরুল ইসলাম। এরপর দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে প্রায় শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন ফখরুল। প্রায় কাজেই তিনি ঘুষ নিতেন। অপরদিকে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক হয়েছেন তারও তথ্য মিলছে।  

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের বিভিন্ন তারিখে ২২টি নৌযানের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে তিনি বেঙ্গল মেরিন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস নামে শিপিং প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ গ্রহণকালে গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে ২২ নৌ-যান থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষ ফখরুলের ঘুষের পরিমাণ বাড়তো বলেও জানা গেছে।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২২ মে ফখরুল ইসলামকে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু চাকরির পর থেকে নৌযানের নকশা অনুমোদনে অর্থ ছাড়া কোনো কাজই করতেন না। এ নিয়ে অধিদপ্তরে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। বর্তমানে অনেক অভিযোগ বিভাগীয়ভাবে তদন্তও চলছে। কয়েক মাস আগেও তার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় নৌ-মন্ত্রালয়ের অতিরিক্ত সচিব একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।  

এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ফখরুল ইসলামকে অপসারণের সুপারিশ করে। কিন্তু নৌ-মন্ত্রণালয় এই দুর্নীতিবাজের পক্ষ নিয়ে বলেছিল, তিনি চলে গেলে সেখানে কাজ করার মতো আর কেউ নেই।  
 
এদিকে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, পিরোজপুরে ফখরুল ইসলামের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যাত্রী ও মালবাহী ১৮টি নৌযান এবং মূল্যবান জমিসহ বিভিন্ন সম্পত্তি তার স্ত্রী মোহসিনা ইসলাম ও সহযোগী নান্না মিয়ার নামে রয়েছে। নান্না মিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়ী অংশীদার ভিত্তিতে লঞ্চ ও কার্গোর ব্যবসা শুরু করেন ফখরুল ইসলাম। বর্তমানে নেছারাবাদের একটি ডকইয়ার্ডে ছয় কোটি টাকা দামের দুটি মালবাহী কার্গো লঞ্চ নির্মাণাধীন রয়েছে ফখরুল ইসলামের। আরও পাঁচটি কোস্টারের নকশা অনুমোদন করা হয়েছে।  

গত বছরে নান্না মিয়া ও ফখরুল ইসলাম এক সাথে হজ পালন করেন। সম্প্রতি নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা বাজার সংলগ্ন মুগাড়ঝোর মৌজায় দুটি বাণিজ্যিক প্লটে ১৩ শতাংশ জমি অর্ধকোটি টাকায় ফখরুল ইসলামের স্ত্রী মোহসিনা ইসলামের নামে ক্রয় করে দিয়েছেন নান্না মিয়া। শুধু তাই নয়, ফখরুলের ঘুষের সহযোগিতার মাধ্যমে নান্না মিয়া কোটিপতি হয়েছেন অভিযোগ রয়েছে।  
 
এ বিষয়ে নান্না মিয়া বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে আমি নৌ যানের ব্যবসা করে আসছি। একজন নৌযান ব্যবসায়ী হিসেবে নৌ-প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু এর মধ্যে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন।  
 
দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ফখরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তার অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনের রহস্য বের করা হবে। এখন তার সকল সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে। এরপর তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটা কমিশন নির্ধারণ করবে। তবে দুর্নীতি করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। মনে রাখতে হবে দুর্নীতিবাজ সবসময় অপরাধী। তারা দেশ ও জাতির শত্রু।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
এসজে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।