শুক্রবার (২১ জুলাই) সকালে একরকম তাড়াহুড়ো করেই দাফন করা হয় ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের ছত্রপুরের হতভাগ্য সুমিকে (২৩)।
জামায়াত নেতা সাবেক উপজেলা আমির আব্দুর রহমান পরিচালিত স্থানীয় আবুসিনা ক্লিনিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সুমি নামের ওই মায়ের সিজারিয়ান অপরেশন করা হয়।
সুমি পৌর এলাকার বন্দ টাকুরিয়া গ্রামের দিনমজুর জনৈক জহিরুল ইসলামের স্ত্রী। জহিরুল বিয়ে করার পর থেকে পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের ছত্রপুর গ্রামের শ্বশুর সহিদ মিস্ত্রির বাড়িতে ঘর জামাই থেকে দিনমজুরী করেন। তাদের ঘরে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া আরেকটি মেয়ে আছে।
এলাকা ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের আগে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ধনবাড়ী পৌর শহরের জামায়াত নেতা ফার্মাসিস্ট আব্দুর রহমান পরিচালিত আবুসিনা ক্লিনিকে ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে ডা. আব্দুর রহিম নামের গাইনি বিভাগের এক প্রশিক্ষিত চিকিৎসককে দিয়ে সিজার করানোর কথা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত মধুপুর উপজেলার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম খোকন নামের এক এনেসথেশিয়াটিস্ট (অজ্ঞানের ডাক্তার) দিয়ে সিজার করায়। সিজার ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় সুমির প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিক সংশ্লিষ্ট এক কর্মচারী বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, অবস্থা খারাপ দেখে রাতে ধনবাড়ী থেকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে সুমির মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে গাইনি বিশেষজ্ঞ মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাবেক প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. আব্দুর রহিম জানান, তাকে দিয়ে সিজার করানোর কথা হয়েছিল কিন্তু পরে ক্লিনিক থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।
সরেজমিন জানা যায়, শুক্রবার সুমির মরদেহ দাফন করা হয়েছে। শিশুটিকে পাশের এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দেয়া হয়েছে। ইব্রাহিম নামে এলাকার এক ব্যক্তি জানান, তার ভাই কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমানের মধ্যস্থতায় ক্লিনিকের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়ার শর্তে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুমির বাবা সহিদ মিস্ত্রি বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।
এদিকে ঘটনার পর থেকে ক্লিনিকের মালিক আব্দুর রহমানসহ স্টাফরা গা ঢাকা দিয়েছেন। ক্লিনিকে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ম্যানেজার মামুন ওরফে খোকা মিয়া জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। একমাত্র আব্দুর রহমানই এ বিষয়ে বলতে পারবেন। আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বারবার তার দু’টি মোবাইল ফোনে চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবর রহমান বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন। ধনবাড়ী উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব আরেফিন রেজানুর জানিয়েছেন, অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, ২১ জুলাই, ২০১৭
আরএ