ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভুল চিকিৎসায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ফাতেমা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
ভুল চিকিৎসায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ফাতেমা

বাগেরহাট: ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অসুস্থ অবস্থায় চার মাস ধরে হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন ফাতেমা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ।

চলতি বছরের ১৫ মার্চ জেলার শরণখোলা উপজেলার সুরাতুন্নেছা ক্লিনিকে অ্যাপেন্ডিক্স রোগের অপারেশন করা হয় তার। অপারেশনের সময় চিকিৎসক ভুল করে ফাতেমার পায়ু পথের একটি নাড়ি কেটে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন ফাতেমার পরিবার।

ফলে ফাতেমা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শরণখোলা থানায় দুইজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন ফাতেমার বাবা। আসামিরা হলেন-ওই ক্লিনিক মালিক আব্দুল মান্নান ও চিকিৎসক ডা. নজরুল ইসলাম ফারুকী।

শুক্রবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় কথা হয় ফাতেমার বাবার সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চারবারের মত ফাতেমার অপারেশন করা হয়েছে। আগের চেয়ে এখন তার অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। আমি আমার মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সেইসঙ্গে ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির চাই।

বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমা। ফাতেমার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন তার স্বামী হেলাল উদ্দিন। শুক্রবার (রাতে) আইসিইউতে রাখার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর রায়েন্দা ইউনিয়নের বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী (ভিক্ষুক) আব্দুস সবুর হাওলাদারের একমাত্র মেয়ে ফাতেমা আক্তার (২০) দীর্ঘদিন ধরে অ্যাপেন্ডিক্স রোগে ভুগছিলেন। তা থেকে মুক্তি পেতে ১২ মার্চ ফাতেমার পরিবারের সদস্যরা তাকে রায়েন্দা বাজার মান্নান সুপার মার্কেটে অবস্থিত সুরাতুন্নেছা সার্জারি ক্লিনিকে ভর্তি করেন। তিনদিন পর ১৫ মার্চ সেখানকার চিকিৎসক ডা. নজরুল ইসলাম ফারুকী ফাতেমার অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করেন। কিন্তু অপারেশনের সময় ভুলক্রমে ফাতেমার পায়ু পথের একটি  নাড়ি কেটে ফেলেন তিনি। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তার স্বজনদের। কিন্তু ধীরে ধীরে ওই গৃহবধূর শারিরীক অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে। একাধিকবার তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হলেও গত চার মাসেও তিনি সুস্থ হয়ে উঠেননি।

অপরদিকে, ফাতেমার বাবা ভিক্ষুক আব্দুস সবুর হাওলাদার ইতোমধ্যে  একমাত্র মেয়েকে সুস্থ করতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন।
ওই চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় বিগত কয়েক বছরে শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জের বহু রোগীর মৃত্যু ঘটেছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।

স্থানীয় রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, ‘উপজেলায় চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসার মনোভাব নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। ওই সব ক্লিনিক ও ডাক্তারদের বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী বাড়ানো প্রয়োজন। ’
তবে ডা. নজরুল ইসলাম ফারুকী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ফাতেমার অ্যাপেন্ডিক্স বের করা যায় নাই। ওপেন করার পর ভেতরে ইনফেকশন দেখে ক্লোজ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ইনফেকশনের কারণে ওই গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

শরনখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল জানান, ফাতেমার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ক্লিনিকের মালিক ও চিকিৎসকের নামে আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ২১ জুলাই, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।