ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অপরিকল্পিত কীটনাশকে পরিবেশ দূষিত চা বাগানে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
অপরিকল্পিত কীটনাশকে পরিবেশ দূষিত চা বাগানে চা গাছে কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে- ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: চা বাগান ও কৃষি চাষাবাদে পোকা ও আগাছা দমনের জন্য মাত্রা অতিরিক্ত ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব কীটনাশক আশপাশের নদী কিংবা জলাভূমিতে মিশে মারা যাচ্ছে মাছ, ব্যাঙ, সাপসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী।

এক হিসেবে জানা গেছে, প্রতি বছর দেশের চা বাগানগুলো কারণে প্রায় ৫০ লাখ লিটার তরল কীটনাশক, চার লাখ মেট্রিক টন রাসায়নিক সার মাটি ও পানিতে মিশছে।

কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এবং তা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি চা বাগান কর্তৃপক্ষ সরবরাহ্ না করায় চা শ্রমিকরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যাচ্ছেন।


 
দেশের ছোটবড় ২০৬টি ছোট বড় চা বাগানে এসব কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট,হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে রয়েছে প্রায় ১৮৩টি চা বাগান।
মেশিনে পানির সঙ্গে কীটানশক মেশানো হচ্ছে- ছবি: বাংলানিউজ
চা বাগানগুলোতে কীটনাশক উডিসাইড, মেলাথিয়ন, ইথিয়ন, কাপরাভিট সহ বিভিন্ন কীটনাশক এবং ইউরিয়া জিংকসহ অন্যান্য সার ব্যবহার হচ্ছে অবাধে। চা শ্রমিকের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নির্বিচারে শ্রমিকদের দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে এসব কীটনাশক ব্যবহার করাচ্ছে চা বাগানগুলোর কর্তৃপক্ষ।
যে সমস্ত চা শ্রমিকরা কীটনাশক ছড়ানোর কাজে নিয়োজিত আছে তাদের মুখোশ, চশমা, গ্লাভস, গাউন, বুট জোতা, মাস্ক এবং টুপিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধী সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় না।

ফলে শ্বাসকষ্ট পেটের পীড়া,চর্ম রোগ,হাঁপানীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন চা শ্রমিকরা। এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে এসব কাজ করার ফলে পুষ্টিহীনতাসহ মরণব্যাধি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। এছাড়া কীটনাশক সহজলভ্য হওয়ায় চা বাগানগুলোতে শ্রমিকদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়।
আবার চা বাগানে ব্যবহার করা কীটনাশক বৃষ্টির পানির মাধ্যমে নদী ও ছড়ায় গিয়ে পড়ছে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে হাওর ও বড় বড় নদীতে। এতে মুক্ত জলাশয়ের মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী বৈচিত্র্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্তভাবে  টিলাভূমি ও কৃষিজমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে এই অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে চা বাগানে অবৈজ্ঞানিক ভাবে এভাবে কীটনাশক প্রয়োগ এ অঞ্চলের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে কী ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে গবেষণা জরুরি বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
চাল তুলছেন এক নারী শ্রমিক- ছবি: বাংলানিউজক্ষতিকর বিষয়টি বর্ণনা বরতে গিয়ে চা শ্রমিক কমলাকান্ত রায়,সিতারাম দাস এবং সুভাষ রায় বাংলানিউজকে বলেন, কীটনাশক স্প্রে করার পর তাদের মাথা ঘোরে, চোখে জ্বলে,পিঠ ব্যথা, শরীর ও হাত-পায়ে চুলকানি হয়ে ঘা হয়ে যায়। খাওয়ার রুচি কমে যায় কোনও কিছু খেতে ইচ্ছা হয় না।
চা শ্রমিক নেতা সিতারাম বীন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর বাগান ম্যানেজমেন্টের সাথে এ নিয়ে তাদের বাদানুবাদ হয়। কখনো কখনো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য কিছু সরঞ্জাম কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করে। কিন্তু সেখানেও সব জিনিসের পরিপূর্ণতা থাকে না।

পরিবেশবাদী সাংবাদিক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন  বলেন , চা বাগানে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে চা শ্রমিকরা যেভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে,তেমনি বৃষ্টির পানি বাহিত হয়ে নদীনালা খালবিলে ডোবা ও পুকুরে কীটনাশক ছড়িয়ে পড়ায় মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। চা শ্রমিকদের গ্লাভস,চশমা,মুখোস,গাউন,বুট,টুপি জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করা আবশ্যক বলেও জানান তিনি।

২৫০ শয্যা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল জুনিয়র কনস্যালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. স্বপন কুমার সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবে চা বাগানে উডি সাইড,রাউন্ড আপ, মেলাথিয়ন,ইথিয়ন, ড্রাগ, কাপরাভিট,ইউরিয়া, জিংকসহ নানাবিধ কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে তাতে করে চা শ্রমিকদের রক্ত দূষণ শ্বাসকষ্ট, চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া, কিডনি, হার্ট ডিজিজ, চর্মরোগসহ নানারোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমনকি ব্লাড ক্যান্সার হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাদেরকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।

কীটনাশকের প্রভাবে বাগান শ্রমিকদের অনেকেরই আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
আরআই/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।