ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সমাজে মানসিক বিকারগ্রস্তের নজির গৃহকর্ত্রী নদী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
সমাজে মানসিক বিকারগ্রস্তের নজির গৃহকর্ত্রী নদী সমাজে মানসিক বিকারগ্রস্তের নজির গৃহকর্ত্রী নদী

ঢাকা: আদুরী; মা-বাবার বেশ আদরের মেয়ে। তাই হয়তো বাবা-মা নাম রেখেছিলেন আদুরী। কিন্তু অভাবের সংসারে সে আদর আদুরীর ভাগ্যে জুটেনি।

শিশুকালে তার বাবার মৃত্যুই যেনো তাকে ঠেলে দেয় কঠিন বাস্তবতায়! তাই অভাবের তাড়নায় অন্যের বাসায় কাজে যেতে হয় তাকে। আর সেখানে গৃহকর্ত্রীর স্নেহ তো দূরে থাক তিন বেলা খাবারই দেওয়া হতো না আদুরীকে।

রাত-দিন হারখাটুনি কাজের পরও আদুরীকে মারধর করতেন গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী। দেওয়া হতো ইস্ত্রি, গরম চামচ বা গরম তেলের ছ্যাঁকাসহ বর্বর আচরণ।

এমনকি তাকে খাবারও দেওয়‍া হতো না। পান থেকে চুন খসলেই চলতো নির্মম নির্যাতন। একজন স্বাভাবিক মানুষ কিভাবে আরেকজন মানুষের ওপর এভাবে নির্মম নির্যাতন করতে পারেন? প্রশ্নটি যেনো সবার মুখেই ঘুরপাক খাচ্ছে।    

তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, গৃহকর্মী নির্যাতন সমাজে একটা ব্যাধি। সমাজের মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষেরাই এই ব্যাধিতে আক্রান্ত। এদের ব্যক্তিত্বে ত্রুটি থাকে, অন্যের জন্য তারা ক্ষতিকর। আদুরীর গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীও বিকৃত সমাজের নজির।

আদুরীকে নির্যাতনের দায়ে মামলায় নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গৃহকর্মী নির্যাতনের দায়ে এটাই বেশ আলোচিত রায়। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গৃহকর্মী নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেককে গ্রেফতারও করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এসব বিষয়ে সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন মনোচিকিৎসক ড. মোহিত কামাল। তিনি বলেন, ‘সমাজের কিছু মানুষ এন্টি সোশ্যাল পার্সোনাল ডিজঅর্ডারে ভুগে, তাদের মধ্যে নির্মমতা কাজ করে। এরা নিজেদের সব সঠিক মনে করে। ফলে অপরাধকেও তারা সঠিক মনে করে।   নিজের হতাশা যন্ত্রণা কাটাতে অন্যের ওপর নির্মম হয় তারা। অনেকটা আত্মকেন্দ্রিকও হয় তারা। ’
সমাজে মানসিক বিকারগ্রস্তের নজির গৃহকর্ত্রী নদীগৃহকর্মী আদুরী নির্যাতন মামলার রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ মামলার রায় দৃষ্টান্তমূলক। অন্তত কেউ গৃহকর্মীর ওপর হাত উঠাতে গেলে এই মামলার রায়ের কথা চিন্তা করবে। যারা ঘরে গৃহকর্মীর ওপর হাত উঠায় তারা এখন সর্তক হবে। এটা একটা দৃষ্টান্ত, এমন বিচার অব্যাহত রাখা উচিত।
 
আদুরী নির্যাতন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুইন আক্তার বাংলানিউজ বলেন, ‘গৃহকর্মী আদুরী নির্যাতনের মামলায় যখন নওরীন জাহান নদীকে গ্রেফতার করা হয়, বা মামলার স্বার্থে যতবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছে ততোবারই তার মধ্যে ক্রুয়েল একটা ভাব দেখেছি। ’
 
‘ব্যক্তিগত অশান্তির কারণে তিনি গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতন করতেন বলেই তদন্তে পেয়েছি আমরা। গৃহকর্মীকে মারলে কোনো বিচার হবে ন‍া এ ধারণাও তার মধ্যে বদ্ধমূল ছিলো। আদুরীর মামলা ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ’

এখন থেকে গৃহকর্মী নির্যাতনের আগে মানুষ আরেকবার ভাববে বলে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
 
২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারা ও ডিওএইচএস তেলের ডিপোর মাঝামাঝি রেললাইন সংলগ্ন একটি ডাস্টবিনের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় কঙ্কালসার ও মৃতপ্রায় আদুরীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের সময় তার শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।

পরে ২৬ সেপ্টেম্বর আদুরীর মামা মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নদীর বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন।
 
এ মামলার দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) নির্যাতনকারী গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
এমসি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।