ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আসামিপক্ষের অন্যায় সমঝোতা রুখে দেন এসআই কুইন আক্তার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
আসামিপক্ষের অন্যায় সমঝোতা রুখে দেন এসআই কুইন আক্তার! আদুরী: বাঁয়ে- ডাস্টবিনে মৃতপ্রায়; ডানে: মামলার শোনার সময় আদালতে

ঢাকা: ‘মামলা চলাকালে বাদীর সঙ্গে বহুবার সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন আসামিপক্ষ। তখন আমি ভাবলাম, আমরা সঠিক বিচারের জন্য এতো কষ্ট করলাম আর বাদীপক্ষ অন্যায় সমঝোতা করে নেবে? এরপর আমরা বাদীকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, যে ব্যক্তি এতোবড় অন্যায় করেছে তার শাস্তি হওয়া উচিৎ।’

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই বলছিলেন আলোচিত গৃহকর্মী আদুরীর নির্যাতন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের তৎকালীন এসআই কুইন আক্তার। যিনি মাত্র ১০ দিনের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

এরপর দীর্ঘ প্রায় চার বছরের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গত ১৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। যে রায়ে গৃহকর্ত্রী নদীর যাবজ্জীবন শাস্তিতে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে।

২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার বছর নারী সহায়তা কেন্দ্রে এসআই হিসেবে দায়িত্বপালনকালে নারী ও শিশু বিষয়ক প্রায় ১৭৫টি মামলা তদন্ত করেছেন কুইন আক্তার। বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হিসেবে সাভার সার্কেলে কর্মরত কুইন মনে করেন, দৃষ্টান্ত স্থাপন করা আদুরীর মামলাটি অন্যায় সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমদিকেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। আসামিপক্ষের বার বার সমঝোতার চেষ্টার পর তিনিই বাদীকে বুঝিয়েছেন।

তদন্তকালীন অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সবকিছুই খুব তাড়াতাড়ি করতে হয়েছে। ভিক্টিম গুরুতর অসুস্থ থাকায় ম্যাজিস্ট্রেটকে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেই ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছি। প্রথম আসামির পর ২য় আসামিকে গ্রেফতার করা হল। যে ডাস্টবিনে আদুরীকে ফেলে রাখা হয়েছিল, সেখানকার আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যারা তাকে ঢামেকে নেওয়ার জন্য পুলিশকে সহায়তা করেছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে অনেক কষ্ট হয়েছে।
এ রায়ে খুশি হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন একটা চার্জশিটের জন্য আমার তদন্তটাও সেভাবেই করতে হয়েছে। নথি লেখার বিষয়েও অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছে। যেন বিচারটা সুষ্ঠু হয়।
তদন্তের পর নিজ দায়িত্বের আওতায় না পড়লেও সাক্ষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে আসতেন তিনি। কারণ সময়মত সাক্ষ্য না পাওয়া গেলে আবারও সময় আবার বাড়বে।

এই রায়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই ২০১৩ সালে নদী গ্রেফতার হয়েছেন আর রায় হয়েছে ২০১৭ সালে। তারপরেও তার জামিন হয়নি। এটাও একটা দৃষ্টান্
যে, এই আসামি এতোবছর জেলহাজতে থাকার পরও জামিন পাননি। মামলার তদন্তে সকলের সহযোগিতা ছিল। এর ফলে সবাই মিলে আমরা ভালো একটা ফল পেয়েছি।

আদুরীকে উদ্ধারের পর তার অবস্থা মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন কুইন আক্তার। তিনি বলেন, মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে মেয়েটা যখন সুস্থ হল তখন আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

এই শাস্তি দেখে সমাজের অন্যরা শিক্ষা পাবে। এমন দু-একটা শাস্তি হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে না; বা ঘটলেও কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

সমাজের অন্যান্যদের প্রতি এই পুলিশ পরিদর্শকের আহ্বান, গৃহকর্মী যদি কাজ করতে না পারে বা কথা না শোনে তাহলে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিন। তার উপর নির্যাতন কেন? সে খেতে পায় না অথবা থাকার জায়গা নেই বলেই সে অন্যের বাসায় কাজ নেয়। অনেকে বলেন, কাজের মেয়ে চুরি করে খায়। ওকে যদি ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় তাহলে সে কেন চুরি করে খাবে?
২০১৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারা ও ডিওএইচএস তেলের ডিপোর মাঝামাঝি রেললাইন সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করা হয় ১১ বছরের শিশু আদুরীকে। নির্যাতন চালিয়ে মৃত ভেবে সেখানে ফেলে দিয়েছিলেন তার গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী।
ঘটনার তিনদিন পর নদীসহ চারজনকে আসামী করে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আদুরীর মামা নজরুল চৌধুরী। সেদিনই গ্রেফতার করা হয় নদীকে। এরপর ১০ অক্টোবর নওরীন জাহান নদী ও তার মা ইসরাত জাহানকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা কুইন আক্তার।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
পিএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad