ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভালুকায় বনের জমি ভুয়া দলিলে কিনে নিল রবিন টেক্সটাইলস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
ভালুকায় বনের জমি ভুয়া দলিলে কিনে নিল রবিন টেক্সটাইলস মানচিত্রে ভালুকা

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী মৌজায় ১৫৪ দাগে বনবিভাগের ১১ একর জমি ভুয়া দলিলে কিনে নিল রবিন টেক্সটাইলস লিমিটেড। এতে দাতা হিসেবে সিরাজুল হক নামের এক অদৃশ্য ব্যক্তির নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও এ নামে বাস্তবে কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই।

জানা যায়, সম্প্রতি ভুয়া দলিল সম্পাদন করে উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারির আবেদন করলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আল জাকির হোসেনের নজরে আসে। পরে তাঁর অনুসন্ধানে জমির দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র ভুয়া প্রমাণিত হয়।

এ অবস্থায় তিনি আবেদন নামঞ্জুর করলে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আল জাকির জানান, রবিন টেক্সটাইলস বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষে রবিন রাজন সারোয়ার নাম খারিজের আবেদন করলে জাল কাগজপত্রের সন্ধান মেলে। কেননা ১৫৪ নং দাগের যৌথ জরিপে দখলকারের তালিকায় সিরাজুল ইসলামের নাম নেই।

বিষয়টিতে সরকারের স্বার্থ জড়িত থাকায় খারিজের আবেদনটি নামঞ্জুর করা হয়েছে। তবে কেন বা কিভাবে সাব-রেজিস্ট্রার এ দলিলটি সম্পাদন করলেন তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল রেজিস্ট্রিকৃত ৩৬৯১ নং সাফ কবলা দলিলের দাতা সিরাজুল ইসলাম ও গ্রহীতা রবিন টেক্স.বাংলাদেশ লি: এর পক্ষে রবিন রাজন সারোয়ার দলিলটি করেন। এ দলিলের মোসাবিদা করেন ভালুকা দলিল লিখক সমিতির ৬৩৯৪ নং সনদধারী সবজুল ইসলাম।

সূত্র জানায়, চুপিসারে সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে কোটি টাকার রফায় দলিল সম্পাদন করে ওই চক্রটি ব্যাংক লোনের প্রয়োজনে সম্প্রতি নাম খারিজের আবেদন করেন। এতেই ঘটে বিপত্তি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুয়া দলিলটি সিরাজুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তির নামে তৈরি করা হয় নান্দাইল ভূমি অফিস থেকে। দলিল সম্পাদনার তারিখ উল্লেখ করা হয় ১৯৭০ সালের ৩০ এপ্রিল এবং এক হিন্দু ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করা হয় বলে দাবী করা হয়।

এরপর সাম্প্রতিক সময়ে ওই ভূমি অফিসে জমির নথি পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে আদালতে মামলাও দায়ের করা হয়।
তবে ভালুকা দলিল লিখক সমিতিসূত্র জানায়, ১৯৭০ সালের কোন এক সময় নান্দাইল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সকল নথি আগুনে পুড়ে যায়।
এ কারণেই ওই প্রতারক চক্রটি ভুয়া দলিলটি বৈধ করতে সরকারকে ধোঁকা দেয়ার জন্য নান্দাইল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কথা উল্লেখ করেন এবং নথি পাচ্ছে না মর্মে আদালতে লোক দেখানো মামলাও দায়ের করেন।

স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্র জানায়, হবিরবাড়ী মৌজার ১০৯ নং খতিয়ানটি বাজেয়াপ্তকৃত (ফরফিটেড) খতিয়ান ভূক্ত এবং ১৫৪ নং দাগটি বন ভূমির আওতাধীন। তবে বর্তমানে বনের ওই জমিটি কিছু অংশ স্থানীয় হাসেম চেয়ারম্যনের ছেলে সবুজ ও বিপ্লব, কিছু অংশ ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মুর্শেদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় উপজেলা বিএনপি নেতা বাউন্ডারী শহীদ ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালের দখলে রয়েছে।

এছাড়াও আরো কিছু জমিতে বাড়িঘর বানিয়ে বসবাস করছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা।

ভালুকা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, ১৫৪ দাগে জমির পরিমাণ ২৯৫.৩০একর। এর মধ্যে ২০১.৫০একর জমির মালিক বনবিভাগ। বাকিটুকু রের্কড ও বন্দোবস্তের সম্পত্তি। এ জমির যৌথ জরিপে দখলদারের তালিকায় সিরাজুল ইসলাম নামক কোনো ব্যক্তির নাম নেই।

হবিরবাড়ী ভূমি অফিসের তহসিলদার ইমাম হাসান জানান, লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে ১৫৪ দাগে সিরাজুল ইসলাম নামক ব্যক্তির কোনো মালিকানা নেই। তবুও কেন এ সরকারী সম্পত্তি ব্যক্তির নামে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাল বলতে পারবেন।
জালিয়াতির এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভালুকা দলিল লিখক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, সাব-রেজিস্ট্রার জেনে-শুনেই এ দলিল সম্পাদন করেছেন।

তবে দলিল লিখক সবজুল ইসলাম দাবি করেন, আগের নায়েব হাসিবুর রহমান সিরাজুল ইসলামের নামে খাজনা রশিদ দিয়েছেন এবং আগের সহকারী কমিশনার ভূমি তানজিউ এ জমি খারিজ করে দিলে পরবর্তী সহকারী কমিশনার ফারজানা এক প্রতিবেদনে ওই খারিজকে বৈধ ঘোষণা করেছেন।

কিন্তু হবিরবাড়ীর ভূমি তহসিলদার ইমাম হাসান দাবি করেন, আগের কোনো খারিজ নথি অফিসে নেই। মূলত প্রতারক চক্রটি পূর্ববর্তী কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষার জাল করে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে ভালুকা সাব-রেজিস্ট্রার শাহ জালাল মোল্লা বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক মনে হওয়ায় দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
কোটি টাকার লেনদেন বিষয়ে তিনি বলেন, কতজনই তো কতো কথা বলে। সব কথা কি ঠিক হয়!বাংলাদেশ সময়:….ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
এমএএএম/জেএম


 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।