ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাটেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম বানভাসিদের

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
পাটেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম বানভাসিদের পাটেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম বানভাসিদের- ছবি- আরিফ জাহান

সারিয়াকান্দির বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে: বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে ক্ষেতের প্রায় সব ফসল। কেবল ঘরে তোলার মতো অবশিষ্ট আছে সোনালী আঁশ, পাট। আর এতেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে ব্যস্ত বানভাসিরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর-রহদহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়ায় গ্রোয়েন বাঁধের গোড়ায় এসে জমে আছে যমুনার পানি। বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে অসংখ্য বানভাসি পরিবার।

গত কয়েকদিনে বন্যার পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচে নেমেছে। তবে কুতুবপুর-রহদহ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বাংশে পানি এখনো নামেনি।

এদিকে পানি আগের তুলনায় কমে যাওয়ায় যমুনার বিভিন্ন চর এলাকায় মাথা উঁচু করে টিকে থাকার কথা জানান দিচ্ছে কিছু ক্ষেতের পাট গাছ। তবে অর্ধেকের মতো নষ্ট হয়ে গেছে। আর যা টিকে আছে, তাতেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত এখন চাষিরা।

অনেক চাষি পাট কেটে এনে বদ্ধ পানিতে জাগ দিয়ে রাখছেন। অনেকে আবার জাগ দেওয়া পাট গাছ থেকে আঁশ ও পাটখড়ি আলাদা করছেন। আঁশ ছাড়ানোর পর বিভিন্ন স্থানে সারিবদ্ধ করে রেখে রোদে শুকাতে দিয়েছেন পাটখড়ি। আর বাঁশের আঁড়ে বা গ্রোয়েন বাঁধের ওপরে শুকাতে দিচ্ছেন সোনালী আঁশ। পুরো কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বানভাসি অসংখ্য নারী-পুরুষ।

পাটেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম বানভাসিদেরচাষি ছমির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন। দেড় বিঘা জমির পাট বন্যায় তলিয়ে গেছে। পানি কিছুটা নেমে যাওয়ায় অবশিষ্ট জমির পাট কাটতে পেরেছেন।
 
একইভাবে ভিক্ষু লাগিয়েছিলেন তিন বিঘা জমিতে। দেড় বিঘা তলিয়ে গেছে। বাকি দেড় বিঘা জমির পাট কেটেছেন। আবদুলের দুই বিঘার মধ্যে এক বিঘা কেটেছেন, বাকিটুকু তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। নুরুল ইসলামের দুই বিঘা তলিয়ে গেছে, আর এক বিঘা জমির পাট কাটতে পেরেছেন।
 
এসব চাষিরা জানান, যমুনার বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসবাস করতেন তারা। বন্যায় যমুনার কড়াল গ্রাসে পাট ছাড়া তারা প্রায় সব হারিয়েছেন। ঘরেও পানি। তাই এক কাপড়ে বাঁধে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এ অবস্থায় পাট থেকে যা আয় হয়, তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

অন্যদিকে বন্যায় কোনো কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরাও। কেবল পাট কেটে আর মাছ ধরে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রোয়েন বাঁধে পাটের আঁশ শুকাতে দু’জন নারীকে ব্যস্ত দেখা গেলো। এদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ পিয়ারা বেওয়া। অন্যজন সাহিদা খাতুন। পিয়ারা বেওয়ার স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। দুই ছেলে আছে। তারা দিনমজুর। মাথা গোঁজার সামান্য ঠাঁই নেই তার। এ বাঁধই তার ঠিকানা। বন্যায় অন্য কোনো কাজ নেই। তাই তার ছেলেরাও পাট কাটার কাজ করেন। আবার সবদিন কাজ থাকে না। তখন না খেয়ে দিন কাটাতে হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
এমবিএইচ/ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।