ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলো রেখেই মহাসড়ক প্রশস্তকরণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলো রেখেই মহাসড়ক প্রশস্তকরণ  যশোর রোড/ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: যশোর-বেনাপোল সড়কের শতবর্ষী ঐতিহাসিক রেইনট্রি, শিশু ও কড়ই গাছ না কেটেই আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটির জন্য সড়কটি সম্প্রসারণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগকে জানানো হয়েছে।

সড়কের শতবর্ষী গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ হাজার গাছে অমানবিকভাবে করাত চালানোর সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়। পরিবেশবাদী ও সাধারণ মানুষ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি।

তারা উদ্বেগ জানিয়ে গাছগুলো কাটলে পরিবেশের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানান। এ সড়কের ভারতীয় অংশে প্রাচীন এসব গাছ রেখে সম্প্রসারণের উদহরণ তুলে ধরা হয় সেসময়।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, গত মার্চে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটিতে যশোর-খুলনা ও যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য ৬শ ৫০ কোটি ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকার দু’টি প্রকল্প পাস করা হয়েছে।

প্রকল্প দু’টির আওতায় যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের (যশোর শহরের দড়াটানা থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট) ৩৮ দশমিক ২০০ মিটার পুনর্নির্মাণ করা হবে। সড়কটির দু’পাশে তিন মিটার প্রশস্ত করা ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩শ ২৮ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এই মহাসড়কের দু’পাশে দুই হাজার ৩১২টি রেইনট্রি, শিশু, কড়ই গাছ এবং এক হাজার ১৮৭টি বৈদ্যুতিক খাম্বা ও ৫২টি টেলিফোন লাইনের পুল রয়েছে।

এছাড়াও যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের (যশোর শহরের পালবাড়ি মোড় থেকে রাজঘাট পর্যন্ত) ৩৮ কিলোমিটার পুনর্নির্মাণ করা হবে। সড়কটির দু’পাশে তিন মিটার প্রশস্ত করা ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩শ ২১ কোটি ৫৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এই মহাসড়কের দু’পাশে থাকা দুই হাজার ৫৫৫টি রেইনট্রি, শিশু, কড়ই গাছ ও এক হাজার ৮শ ৫০টি বৈদ্যুতিক খাম্বা এবং ৮৮টি টেলিফোন লাইনের পুল রয়েছে।

উভয় মহাসড়কের পাশ থেকে বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের পুল সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দিয়েছে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক গাছগুলো কাটার পরিকল্পনা থেকে সরে এসে গাছ রেখেই রাস্তা পুনর্নির্মাণে পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছে সওজ। চলতি মাসেই এই উন্নয়ন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে।

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছোলজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই মহাসড়কে প্রায় ৩০ ফুট কংক্রিটের আস্তরণ রয়েছে। এছাড়া দু’পাশে ঢাল (স্লপ) রয়েছে আরও ছয় ফুট করে। এই হিসাবে মহাসড়কটির প্রস্থ গড়ে ৪০ ফুট। এই ৪০ ফুট প্রশস্থতাকে মিটারে রূপান্তর করা হলে দাঁড়াবে প্রায় ১২ মিটারে। আর ৭৬ কিলোমিটার রাস্তা মিটারে রূপান্তর করে গণনা করলে দাঁড়াবে ৭৬ হাজার মিটারে।

এর সঙ্গে মহাসড়কের ১২ মিটার প্রশস্ততা গুণ করলে দেখা যাবে এ মহাসড়কে ৯ লাখ ১২ হাজার স্কয়ার বিস্তৃত ক্যানোপি বা সবুজ পাতার আচ্ছাদন রয়েছে। সবুজের এই আচ্ছাদন ছায়া দেওয়ার পাশাপাশি সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে প্রাণীকুলকে রক্ষা করে, বায়ু, শব্দ দুষণ নিয়ন্ত্রণ করে। ওজনস্তরের ভারসাম্য রক্ষা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। মহাসড়ক সম্প্রসারণের জন্য এতো সংখ্যক বৃক্ষ নিধন পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতো। মরুকরণ প্রক্রিয়া তরান্বিত ছাড়াও কৃষি ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

যশোর সামাজিক বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (সদ্য বিদায়ী) মইনুদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম থেকেই আমরা গাছগুলো রক্ষার চেষ্টা করছি, যদি গাছগুলো কাটা বন্ধ হয় সেটা খুবই কল্যাণকর, এটা আমাদের জন্য আনন্দের।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেহেদী ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, গাছ না কেটে মহাসড়ক দু’টির পুনর্নির্মাণের জন্য সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। সে মোতাবেক কাজ চলছে, আশা করি দ্রুত টেন্ডার আহ্বান করতে পারবো। এছাড়াও বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের পুল অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।