ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাথা গোঁজার ঠাঁই চান ৩৫ বছর পর ফিরে আসা নুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
মাথা গোঁজার ঠাঁই চান ৩৫ বছর পর ফিরে আসা নুরু মা রিজিয়া বেগমের সঙ্গে ছেলে নুরুল ইসলাম। ছবি: বাংলানিউজ

পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর হলতা গ্রামে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হারানো ছেলে ফিরে আসায় আনন্দের বন্যা বইছে।

গত ১৩ জুলাই নুরুল ইসলাম (৫০) ফিরে আসেন। ঢাকায় থাকা মা রিজিয়া বেগম (৭৫) পরদিন বাড়িতে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নুরুকে দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন।

উত্তর হলতা গ্রামের মৃত ইম্মাত আলীর ছেলে নুরুল ইসলামরা ৪ ভাই-বোন ছিলেন। তাদের মধ্যে এক বোন মারা গেছেন। দারিদ্র্যের কারণে ৩৫ বছর আগে শিশু বয়সে ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন তিনি।

এরপর জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে বাড়িতে ফিরে এলেও দারিদ্র্য এখনও তাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। দুই সন্তানকে নিয়ে স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। মানসিকসহ নানা রোগও বাসা বেধেছে শরীরে। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন নুরুর।

নুরুকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে ছোট ভাই টুটুল কয়েক বছর পর বোনদের বিয়ে দিয়ে মাকে নিয়ে ঢাকা চলে গিয়েছিলেন।

মা রিজিয়া আগের দিন রাতে ছেলের ফেরার স্বপ্ন দেখেন। পরদিন বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে জানতে পারেন, সত্যি সত্যিই তার ছেলে বাড়ি ফিরেছেন।

১৪ জুলাই নুরুর ভাই টুটুল, তার মা ও স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়িতে এলে এলাকায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে গেলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া প্রকাশ করে মা রিজিয়া বলেন, ‘৩৫ বছর পর হলেও আমার কাছে যেন সেই শিশু নুরুই ফিরে এসেছে। এখন নাতিদেরও আনতে চাই’।

ছোট ভাই টুটুল বলেন, ‘ভাইকে ফিরে পেয়েছি। তার চিকিৎসাসহ যা কিছু দরকার, সবই করবো’।

মা ও ভাইকে নিয়ে তিনি আবার নতুন জীবন শুরু করতে চান নুরুল ইসলাম। মাথা গুঁজতে একখণ্ড জমির জন্য সরকারের কাছে দাবি এবং বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ও বিত্তবানদেন সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

জানা গেছে, স্ত্রী ও ৪ সন্তানসহ ইম্মাদ আলীর কোনো ভিটে-মাটি ছিল না। দিনে কামলা খেটে পরিবার নিয়ে অর্ধাহার-অনাহারে থাকতেন। রাতে ছোট ভাই হযরত আলীর জীর্ণ কুটিরের একাংশে ঠাঁই নিতেন।

নুরুল ইসলামের ১০/১১ বছর বয়সে ইম্মাদ আলী মারা গেলে ছোট ছোট ৪টি সন্তান নিয়ে স্ত্রী রিজিয়া বেগমের ওপর ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। ওই সময় এলাকার এক আইনজীবী টুকটাক কাজের বিনিময়ে লেখাপড়া করাবেন বলে নুরুকে ঢাকায় তার বাসায় নিয়ে যান।
লেখাপড়ার পরিবর্তে নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৮ মাস পরে ওই বাসা থেকে পালালে সেই থেকে নিখোঁজ হয়।

কিশোর নুরু অচেনা ঢাকায় দিনে পানি ও সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে রাতে ফুটপাতে কাটাতো। এক সময় পরিচয় হয় চট্টগ্রামের সরকারি চাকরিজীবী মো. কবিরের সঙ্গে। বাসায় কাজ করাতে তিনি নুরুলকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে নিয়ে যান।

কয়েক বছর পর (১৭/১৮ বছর আগে) স্থানীয় ঝর্ণা আকতারকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন নুরু। বিয়ের পর বাড়িতে ফিরতে চাইলেও স্ত্রী বাঁধা দেন। মানুষের ক্ষেতে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে সংসার চলতো না। অশান্তির সংসারে স্ত্রীর মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হন নুরু।

২ বছর আগে স্ত্রী ঝর্ণা তাদের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা ও ছেলে ইসমাইল হোসেনকে নিয়ে নুরুকে ছেড়ে তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে চলে যান। এ ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে উম্মাদের মতো পথে পথে ঘুরতে থাকেন।

ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে গত ১৩ জুলাই নিজ গ্রামে চাচার বাড়িতে ফিরে আসেন নুরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।