ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তারুণ্য দীপ্ত ৯ সম্পাদকের গল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
তারুণ্য দীপ্ত ৯ সম্পাদকের গল্প খুলনা থেকে প্রকাশিত ৯ দৈনিকের তরুণ সম্পাদকরা

খুলনা: তারুণ্যে ঝলমল খুলনার মিডিয়া অঙ্গন। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ নগরী থেকে নিয়মিত প্রকাশিত ১৫টি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকার মধ্যে ৯টিরই সম্পাদক বয়সে তরুণ। অনলাইন নিউজ পোর্টালের ধাক্কায় খবরের কাগজের টালমাটাল বাজার ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিত্য-নতুন কৌশল নিচ্ছেন তারা। বয়সে তরুণ বলেই হয়তো হালের প্রযুক্তিতে ভর করে পাঠক টানার চেষ্ট করছেন অনলাইন সংস্করণে। তরুণ এই ৯ চেঞ্জ মেকারের একেক জনের গল্প একেক রকম।    

 

এসব তরুণ সম্পাদকের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু’র ছেলে, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ও দৈনিক জন্মভূমি’র সম্পাদক আসিফ কবির। মাত্র ২১ বছর বয়সে সম্পাদনা শুরু করেন তিনি।

তবে দায়িত্ব গ্রহণের দিক থেকে সবচেয়ে নবীন তরিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী সনি। আর সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণকাল হিসেবে ধরলে সবচেয়ে পুরনো সম্পাদক মোস্তফা সরোয়ার, তারপর আসিফ কবির।

মো. তরিকুল ইসলামদৈনিক সময়ের খবর এর পরিচালক মো. তরিকুল ইসলাম রোববার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশকের গুরু দায়িত্ব। সময়ের খবর এর নতুন এই সম্পাদক সময় টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলানিউজকে তরিকুল বলেন, এ অঞ্চলে গণমানুষের পত্রিকা সময়ের খবরকে আরো পাঠকপ্রিয় করে তুলতে নতুন কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমি একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে সময়ের খবরের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছি এবং করবো।
 
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) অর্ধ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক পূর্বাঞ্চল এর প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব নেন মোহাম্মদ আলী সনি। বাবা লিয়াকত আলীর মৃত্যুর পর প্রকাশক ও সম্পাদক পদটি খালি হওয়ার দেড় বছরের মাথায় তিনি এ দায়িত্ব নেন। মোহাম্মদ আলী সনি
 
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স, ক্যালিফোর্নিয়ার অন্টারিও ক্যাম্পাস থেকে ২০১২ সালে এমবিএ (এইচসিএম-হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স) ডিগ্রি অর্জন করেন সনি। তিনি ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কেলার থেকে এমআইএসএম (ইনফরমেশন টেকনোলজি) ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ  (আইইউবি) থেকে ১৯৯৯ সালে বিএসসি (কম্পিউটার সায়েন্স) ডিগ্রি লাভ করেন সনি।

বাংলানিউজকে সনি বলেন, দল-মতের উর্ধ্বে উঠে গণমানুষের সব খবর আমরা প্রকাশ করে আসছি। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
 
এস এম খালেদীন রশিদী সুকর্ণদৈনিক পাঠকের পত্রিকার সম্পাদক তারুণ্যে ভরা ‍যুবক এস এম খালেদীন রশিদী সুকর্ণ। পত্রিকাটি ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে। সুকর্ণের বাবা খুলনা- ৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা।

আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মার্কোস থেকে গ্লোবাল বিজনেস ম্যানেজমেন্টে বিএসসি ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। শিল্প উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মী  হিসেবেও সমধিক পরিচিতি আছে তার।

এছাড়া তিনি খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য, আবাহনী ক্রিকেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

তরুণ এ সম্পাদক বাংলানিউজকে বলেন, সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা তুলে ধরে তাদের অধিকার নিশ্চিতে সহযোগিতা করা আমার পত্রিকা প্রকাশের লক্ষ্য। পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে তরুণ সমাজের নীতি নৈতিকতা সৃষ্টি, তাদের ভাবনা, উদ্ভাবন, চিন্তা-চেতনা প্রকাশের একটি প্লাটফর্ম তৈরি করাও উদ্দেশ্য।
 
দৈনিক আমার একুশে’র প্রধান সম্পাদক আতিয়ার পারভেজ। ২০১৬ সালে পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করে।   তিনি বাংলাভিশন টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো প্রধান ও মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। আতিয়ার পারভেজ

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাহান্ন’র একুশ ও একুশ শতকের আগামী। প্রথমটি চেতনার একুশকে ধারণ করে বাংলাদেশের জন্ম, অন্যটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পুরোপুরি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার গল্প শুনাতে চায় বিশ্বকে। এই দুইকে ধারণ করে খবরের কাগজের যে আসল কাজ ‘সময়ের চিত্র’ পাঠকের সামনে উপস্থিত করা, আমরা তাই করছি ‘সোজাসাপ্টা প্রতিদিন’ শ্লোগান ধরে।

তিনি আরো বলেন, আঞ্চলিক সংবাদপত্র প্রকাশ সত্যি বড় চ্যালেঞ্জ। নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় প্রতিদিন। আমরা পত্রিকাকে পদ্মার এপারে পাঠকের আত্মার-আত্মীয় করতে একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি। বাড়তি কিছু নিয়ে পাঠকের সামনে নতুন কলেবরে হাজির হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ।
 
 মিজানুর রহমান মিলটনদৈনিক খুলনাঞ্চল এর সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলটন। ‘মুক্ত প্রকাশ, মুক্ত বিকাশ’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে দৈনিকটি। তিনি এশিয়ান টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো প্রধান।  

বাংলানিউজকে মিলটন বলেন, পত্রিকাটি প্রথমে সাপ্তাহিক হিসেবে বের করি। বুকের ভেতর সাহস আর বিশ্বাস ছিলো এটিকে দৈনিক করতে পারবো। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারবো। তাই শত বাধা সত্ত্বেও হাল ছাড়িনি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্যই এক ঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মী নিয়ে কাজ শুরু করলাম দৈনিক খুলনাঞ্চলের।
 
মুন্সী মাহবুব আলম সোহাগদৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার যাত্রা শুরু ২০১৩ সালের মার্চ মাসে। শুরু থেকেই পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মুন্সী মাহবুব আলম সোহাগ। তিনি মোহনা টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো প্রধান। এছাড়া তিনি খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি।

সোহাগ বলেন, মানুষের জন্য, দেশের জন্য, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কাজ করছি। তুলে ধরছি সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র।
 
সাহিদ হোসেনদৈনিক দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক এস এম সাহিদ হোসেন। ২০১১ সালের ১০ জুলাই পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করে।

প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৬ এ ভূষিত হন সাহিদ হোসেন। তিনি সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি সভাপতি এবং খুলনা প্রেস ক্লাবের তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত সহ-সভাপতি।

বাংলানিউজকে সাহিদ বলেন, দখিনাঞ্চলের মানুষের মুখপাত্র হিসেবে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে পত্রিকাটি।
 
আসিফ কবিরদৈনিক জন্মভূমি‘র প্রকাশক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব আসিফ কবির। খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, দৈনিক জন্মভূমি সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু’র বড় ছেলে তিনি। ২০০৪ সালের ২৭ জুন সন্ত্রাসীদের বোমায় বালু নিহত হওয়ার পর ওই বছরই আসিফ কবির পত্রিকার প্রকাশনা ও সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। এর আগে ২০০১ সালে তিনি খুলনার একমাত্র সান্ধ্য দৈনিক রাজপথের দাবি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।
 
পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগি লাভ করেন আসিফ কবির। পত্রিকার প্রকাশনাসহ ২০০৯ সাল থেকে তিনি সুনামের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। জন্মভূমি পত্রিকাটি’র এখন ৪৭তম বছর চলছে।  

আসিফ কবির বলেন, আব্বার অকাল মৃত্যুর পর আমাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। খুব অল্প বয়সেই জন্মভূমি ও রাজপথের দাবির হাল ধরতে হয়েছে। বিজ্ঞাপন যাতে না পাই সে জন্য একটি পত্রিকার বয়োজ্যেষ্ঠ সম্পাদক আমাদের পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে বলে মিথ্যাচার করেছেন। তিনি পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক লিয়াকত আলীর মৃত্যুর পরও একই অপপ্রচার চালিয়েছেন। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।    
 
মোস্তফা সরোয়ারসততাই আমাদের সাহস- এই শ্লোগান নিয়ে ২০০১ সালের ১ জুন দৈনিক প্রবর্তন পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। একদল তরুণ সংবাদ কর্মী নিয়ে প্রবর্তন পরিবারের যাত্রা শুরু হয় অনাড়ম্বরে। অর্থ সংকট, অবহেলা, সমাজের অধিকর্তাদের অসহযোগিতা মাথায় নিয়েই শুরু হয় অবিরাম পথ চলা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, সমাজের অসংগতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কলমে যুদ্ধ ছিল নৈমিত্তিক। খবরের পেছনের খবর প্রকাশ করতে গিয়ে বোমা হামলা থেকে শুরু করে মামলার শিকার হয়েছি অগণিত। - এমনটি বলেন দৈনিক প্রবর্তনের সম্পাদক মোস্তফা সরোয়ার।

শুরুর গল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণণায় তিনি বলেন, যাত্রার শুরুতে আমার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। প্রথম যখন প্রবর্তন প্রকাশিত হয় তখন নিজস্ব প্রেস ছিল না, যে কারণে পড়তে হতো বিড়ম্বনায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
এমআরএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ