ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আড়াই মাস আগে নিখোঁজ হন জঙ্গি রাশেদুন্নবী

পিয়ারুল ইসলাম হুমায়ূন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
আড়াই মাস আগে নিখোঁজ হন জঙ্গি রাশেদুন্নবী ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নে রাশেদুন্নবীর বাড়ি- ছবি: বাংলানিউজ

গাইবান্ধা: সাভারের আশুলিয়ার ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পন করা চার জঙ্গির একজন মো. রাশেদুন্নবী (২১)। রাশেদুন্নবী আত্মসমর্পন করার আড়াই মাস আগে বগুড়ার একটি ছাত্রাবাস থেকে নিখোঁজ হন।

জঙ্গি মো. রাশেদুন্নবীর বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের দক্ষিণ উদাখালি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের হোমিও চিকিৎসক মো. রেজাউল করিমের ছেলে।

রাশেদুন্নবী ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। ২০১৪ সালে একই উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের জমিলা আক্তার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর বগুড়ার সূত্রাপুর আরএম ছাত্রাবাসে থেকে প্যাথলজি বিষয়ে সাইক ইনষ্টিটিউট অফ মেডিকেল টেকনোলজিতে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি ওই কলেজের চতুর্থ সেমিষ্টারের ছাত্র।

জঙ্গি রাশেদুন্নবীর বাড়িতে তার বাবা রেজাউল করিম, মা রিনা বেগম, বড়বোন রেহেনা খাতুন, বড়ভাই রানা মিয়া থাকেন। এছাড়া অপর দুই বোন ইসমত আরা ও নাজমুন নাহার বিয়ের পর থেকে স্বামীর বাড়িতে। এদের মধ্যে বড় বোন রেহেনা খাতুন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাড়িতে ও বড় ভাই রানা মিয়া ঢাকার একটি কলেজে মাস্টার্সে পড়ালেখা করেন।

এর আগে, গত ২ মে সন্ধ্যার পর দুইজন অপরিচিতি বন্ধুকে নিয়ে ছাত্রাবাস থেকে বেড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে রাশেদুন্নবী নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ঘটনায় তার বড় ভাই মো. রায়হান ইসলাম গত ২২ মে বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যাহার জিডি নম্বর ১৬৮৬।

এদিকে, ১৬ জুলাই রাত ১টার পর সাভারের আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চৌরাবাড়ি এলাকায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালান র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা। পরে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টার অভিযানে ওই বাড়ি থেকে চার জঙ্গি আত্মসমর্পন করেন। চার জঙ্গির একজন হলেন মো. রাশেদুন্নবী। বাকি তিনজন হলেন, মোজাম্মেল হক, ইরফানুল ইসলাম ও আলমগীর।
রাশেদুন্নবী নিখোঁজ হাওয়ার পর ভাইয়ের করা সাধারণ ডায়েরিসোমবার (১৭ জুলাই) বিকেলে জঙ্গি মো. রাশেদুন্নবীর উদাখালি গ্রামের বাড়িতে গেলে কথা হয় তার বাবা মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে বগুড়ার সূত্রাপুরে একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করে। সে গত ২৭ এপ্রিল গ্রামের বাড়িতে আসে। এরপর গত ১ মে আমার কাছে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে ছাত্রাবাসে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু পরদিন ২ মে রাশেদুন্নবী পরীক্ষায় অনুপস্থিত বলে তার কলেজ থেকে ফোন করা হয়। পরে ওইদিন আমি বগুড়া গিয়ে প্রথমে কলেজ ও পরে তার ছাত্রাবাসে খোঁজাখুঁজি করে তার কোন সন্ধান পাইনি।

পরে ছাত্রাবাসের মালিক আমাকে বললেন, কয়েকদিন ধরে দুইজন অপরিচিত ছেলে ছাত্রাবাসে আপনার ছেলের সঙ্গে দিনে রাতে থাকতো। এরপর ছাত্রাবাসের মালিক রাশেদুন্নবীকে বিষয়টি অবগত করলে সে ছাত্রাবাস থেকে বেড়িয়ে যায়।

এদিকে, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার কারণে গত ২২ মে আমার বড় ছেলে রায়হানের মাধ্যমে বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করাই। কিন্তু গত ১৬ জুলাই ফেসবুক মারফত জানতে পারি আমার ছেলে জঙ্গি। সে ঢাকায় র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পন করেছে।

আমার ছেলে জঙ্গি। এটা ভাবতে পারছি না, হোমিও চিকিৎসা করে এতোবড় সংসার চালিয়েও দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছি। তবে, আমার ছেলে যদি প্রকৃতই জঙ্গি হয়ে থাকে তার বিচার হোক। এটা আমিও চাই।

ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান জঙ্গি রাশেদুন্নবী সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, তার বিরুদ্ধে ফুলছড়ি থানাসহ জেলার কোন থানায় মামলা বা কোন অভিযোগ নেই।

এদিকে, ১৬ জুলাই রাত ১টার পর সাভারের আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চৌরাবাড়ি এলাকার ওই বাড়ি থেকে চার জঙ্গিকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করেন র‌্যাব। পরে দুপুরে অভিযান শেষে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, আত্মসমর্পন করা চার জঙ্গি সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।