ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এবার বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়মে আনার পরিকল্পনা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
এবার বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়মে আনার পরিকল্পনা! পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবন

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হানার একবছরে মাথায় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়মের মধ্যে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, কারো সাথে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ বা আলোচনা করতে হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  মাধ্যমেই যেতে হয়। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা এসব কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও নিয়ম কানুন মানছেন না। 

দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে মন্ত্রী বা সচিবদের সঙ্গে দেখা করছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, স্পর্শকাতর বিষয়ে বক্তব্য রাখছেন। এমনকি ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নিয়ম থাকলেও তা তারা আদৌ করছেন না। কিছুদিনের মধ্যে তাদের এসংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।  আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এটি বাস্তবায়ন করতে চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ একটি নতুন ‍নিরাপত্তা-যুগে প্রবেশ করেছে। বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তার খাতিরেই তাদের নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদূত খুব সহজেই সরাসরি মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন। সংবাদ মাধ্যমে কথা বলছেন। কিন্তু তাদের দেশে তারা তেমন কিছুর চর্চা আমাদের করতে দেন না। আমরাও করি না বা করতেও চাই না। কিন্তু এখন সময় এসেছে তাদের নিয়ম-কানুনের মধ্যে আনার।  

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যেভাবে কথা বলেন এমনটা যদি আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের দেশে গিয়ে করেন তাহলে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে তারা বের করে দিতে পারে।  

নিয়ম হলো বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যদি অন্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান, সবার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণলয়ের সঙ্গে ডেট ঠিক করে। এটাই নর্মস বা শিষ্টাচার। সারা বিশ্বেই এই শিষ্টাচার মেনে চলা হয়। আমাদের দেশে তার বালাই নেই। আমাদের দেশে সমস্যা হলো, মন্ত্রী-সচিবরা হীনমন্যতায় ভোগেন। তারা মনে করেন, তাদের সঙ্গে কোনো রাষ্ট্রদূত দেখা করতে এলে বুঝিবা তার ইজ্জত-সম্মান অনেক বেড়ে যায়! 

তিনি বলেন, আরো সমস্যা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে। সেখানেও আনঅফিসিয়ালি এটাকে উৎসাহিত করা হয়। অনেকদিন ধরে আমরা এনিয়ে বলে আসছি। কিন্তু তাতে কোনো  ফল হয়নি। আমি এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের পক্ষে অনেক দেশ আছে যেখানে কোন দিনই সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয় না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তো দূরের কথা! ব্যতিক্রম তখনই হয়, যখন ঐদেশের কোনো ইস্যু থাকে। উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, নয়াদিল্লিতে যে আমাদের হাইকমিশনার আছেন, তিনি শুরু থেকে কোনো দিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। বিদায়ী সাক্ষাতের তো প্রশ্নই ওঠে না! ভিয়েনা কনভেনশনে বলা আছে, রাষ্ট্রদূতদের সকল যোগাযোগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই করতে হবে।  

সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেন, এই ধারাটা চালু করেছেন পাকিস্তান আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি ক্যডাররা। যাদের আমরা সিএসপি বলে থাকি। রাষ্ট্রদূতদের যাচ্ছেতাই সাক্ষাৎ শুরু হয় রাষ্ট্রপতি এরশাদের আমলে। যেকোনো মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকলকে জানাতে হয়। কিন্তু সরাসরি দেখা করা গেলে তা করতে দেবেন  কেন!  

‌তিনি বলেন, ইআরডিতে (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) বিদেশি সহায়তার বিষয়গুলো আসতে শুরু করল তখন সেখানকার আমলারা বলতে শুরু করল এটি অর্থনীতিক বিষয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করার দরকার নেই। এ আমলারা  পাকিস্তান আমলে ফরেন সার্ভিসে ঢুকতে পারেনি। তাই তারা ফরেন সার্ভিসের নবাগত কর্মকর্তাদের পাত্তা‌ই দিত না। এরপরেই এ কালচার শুরু হল। আর থামছে না। অন্যদেশে এ সকল বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়া আর কারো সঙ্গে আলাপ করার কোনো অবকাশ নেই।  

এ কালচার পরিবর্তন করা খুবই কঠিন। গত ৩৫ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে এ সিএসপি আমলাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেরে ওঠেনি। যারা তখন আমলা ছিলেন তাদের কেউ কেউ সচিব বা মন্ত্রী হয়েছেন। তাই তাদের প্রভাব এখনও বিদ্যমান।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
কেজেড/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।