ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘শিক্ষিকা ফেরদৌসীর নিখোঁজ হওয়ার ধরনটি সন্দেহজনক’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
‘শিক্ষিকা ফেরদৌসীর নিখোঁজ হওয়ার ধরনটি সন্দেহজনক’

ঢাকা: রাজধানীর ধানমন্ডির ‘ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ নামের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের গণিত বিষয়ের শিক্ষিকা ফেরদৌসী ইকরাম ফসিয়া (৩১) দুই সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তবে তার এই নিখোঁজ হওয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছে পুলিশ।

গত ২ জুলাই সন্ধ্যায় গ্রিন রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি ফেরদৌসী। এ ঘটনায় গত ৩ জুলাই তার বাবা এ কে এম ইকরাম উল্লাহ কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১১৪) করেন।

পুলিশ জানায়, ২ জুলাই সন্ধ্যায় ফেরদৌসি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হন। এ সময় নিজের মোবাইল ফোনটি বাসায় রেখে গেছেন। তিনি বিশেষ ইসলামিক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সবসময় হিজাব পরতেন। পুলিশ তার এই রহস্যজনক অন্তর্ধান বা নিখোজ হওয়াকে যথেষ্ট সন্দেহের চোখে দেখছে পুলিশ।  

এ প্রসঙ্গে কলাবাগান থানার পরিদর্শক(তদন্ত)সমীর সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘তার আচার-আচরণ ও নিখোঁজ হওয়ার ধরনটি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। তিনি কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীতে জড়িয়েছেন কি না সেটি মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। এজন্য তার অতীত লেখাপড়ার স্থান ও পরিচিতদের মধ্যে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ’

তার রেখে যাওয়া মোবাইল ফোনটির কললিস্ট পরীক্ষা করেও দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ফেরদৌসীর বাসায় যোগাযোগ করা হলে ঐ বাসার কেয়ারটেকার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ফেরদৌসী খুব সকালে বাসা থেকে বের হতেন। ফিরতেন সন্ধ্যার পর।

তবে ম্যাপল লিফ স্কুলে ফেরদৌসী যে শাখায় কর্মরত ছিলেন সে শাখার সুপারভাইজার আসাদ বলেন, সকাল আটটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত আমাদের শিফট। তারপরে কয়েকজন কম্পিউটার শিক্ষার্থীর ক্লাস চললেও সেটা চলতো সর্বোচ্চ দুপুর সোয়া দুইটা পর্যন্ত। আর ফেরদৌসী যেহেতু গণিতের শিক্ষক ছিলেন তিনি দেড়টার পর আর স্কুলে থাকতেন না।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি আমাদের এখানে জয়েন করেন। কিন্তু তার আচার-আচরণে কখনো সন্দেহজনক কিছু মনে হয়নি। তবে, কারো মনের মধ্যে কিছু আছে কি না সেটাতো আমরা বলতে পারব না।

ঐ স্কুলের অধ্যক্ষ আলী কারাম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, বন্ধের পর ৩ জুলাই আমাদের স্কুল খুলেছে। কিন্তু খোলার দিন থেকেই ফেরদৌসী অনুপস্থিত। প্রথমে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান তিনি অসুস্থ্। তার দু-একদিন পর তার পরিবার জানায়, তিনি আর আসবেন না।

ফেরদৌসী বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স এবং আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। তার বাবাও ম্যাপল লিফ স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

ফেরদৌসীদের গ্রিনরোডের ১৫২/১ নং বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ এ বিষয়ে তাদের কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাসার কেয়ারটেকার হোসেন বলেন, ম্যাডাম ৫ তলার একটি ফ্ল্যাটে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সম্ভবত সবার বড় ছিলেন। তিনি সকাল আটটার দিকে বাসা থেকে বের হতেন, আর মাগরিবের নামাজের পর ফিরতেন। তিনি সবসময় ইসলামিক লেবাসে থাকতেন। এমনিতে আমাদের সঙ্গে কখনো কথা বলতেন না।

ঘটনার দিনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেদিন বৃষ্টিতে বাসার সামনের রাস্তা ডুবে যায়। সন্ধ্যার পর কখন তিনি বের হয়েছেন তা ঠিক বলতে পারব না। পরে স্যার (ফেরদৌসীর বাবা) আমাদেরকে নিয়ে আশ-পাশে খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু তাকে আর পাওয়া যায়নি।

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, ফেরদৌসী রাত নয়টার দিকে বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলেই চলে যান বলে জিডিতে তার বাবা উল্লেখ করেছেন। আমরা তার বাসার আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। এখনো তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো ধারণা পাইনি।

বাংলাদেশ সময়:২২১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
পিএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।