১৯৭৭ সালে তৎকালীন তেজগাঁও থানাধীন মাতুয়াইল ইউনিয়নের ডগাইর এলাকার দানবীর মরহুম মো. রুস্তুম আলী, গরীব দু:খীদের চিকিৎসাসেবা দিতে কেন্দ্রটির জন্য জমি দান করে ছিলেন। প্রথমদিকে একটি টিনের ঘর তুলে সেবা কার্যক্রম শুরু করা হলেও পরে আস্তে আস্তে একতলা দালান ঘরে তা পরিচালিত হয়।
কিন্তু বারো মাসের প্রায় ছয় মাসই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থাকে পানিবন্দী। পুরনো দালানঘর ও জমি নিচু হয়ে যাওযার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যায়। আর তা নিষ্কাষন হতে না পারায় জমে থাকে মাসের পর মাস। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দুটি ইউনিয়নের সামর্থ্যহীন গরীব মানুষগুলো। শনিবার(১৫ জুলাই)বাংলানিউজের ক্যামেরায় ধরা পড়ে কচুরিপানায় পুরো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের চারিদিকটা একাকার হয়ে আছে। ঘরগুলোর ভিতরে হাঁটু পানি। দেখে মনে হচ্ছিল, কয়েক বছর এই কেন্দ্রের ভিতরে কোনো কার্যক্রম চলে নাই। দেয়ালে কাদা লেগে আছে, নোংরা পরিবেশ, মাকড়সার জালে ভর্তি পুরো ঘর।
হঠাৎই চোখে পড়লো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের পাশের রাস্তার উপর বেশ কিছু মহিলা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। সামনে যেতেই দেখতে পেলাম খোলা আকাশের নিচে বসে একজন মহিলা চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। কথা হলো সাব অ্যাসিসট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শিল্পী রানীর সাথে। সখেদে তিনি বললেন, বছরে প্রায় সাত মাস এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পানির নিচে থাকে ।
তাই বাধ্য হয়ে আমাদের রাস্তায় এসে সেবা দিতে হয়। বৃষ্টির দিন হলে তো কথাই নেই। রাস্তায়ও পানি জমা হয়ে যায়। তাই দরিদ্র মানুষদের কথা চিন্তা করে কখনো কখনো পাশের ফার্নিচারের দোকানে বা খাবারের হোটেলে বসে সেবা দিতে হয়। কিন্তু কতদিন এভাবে সেবা দেয়া যায়!
প্রশাসনকে অনেক বছর ধরে বলা হচ্ছে এই কেন্দ্রের এহেন অবস্থার কথা। কিন্তু প্রশাসন কোনো কর্ণপাতই করছে না।
সেবা নিতে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলতে গেলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সাংবাদিকরা শুধু লিখে নিয়ে যায়। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তো কোনো উন্নতি হয় না। ২০ বছর ধরে এমন করুণ অবস্থা।
তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের তো সবসময় সেবা দেয়া হয় না। এই কেন্দ্রে যারা কাজ করেন তারা আসলে বসে বসেই বেতন পান। আমাদের নামে যে ঔষধ বরাদ্দ থাকে তা যায় কোথায়? সরকারি নিয়মে সপ্তাহে ৫দিন টিকা দেযার কথা। কিন্তু মাত্র একদিন (বুধবার) টিকা দেয়া হয়। আমাদের কথা আসলে কেউই ভাবে না।
এ জনাকীর্ণ সারুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র সম্পর্কে কথা হয় পরিবার কল্যাণকেন্দ্টির পরিদর্শক লতিফা পারভীন(এফ ডব্লিউ ভি)এর সাথে।
তিনি বলেন, আমি ২৪ বছর ধরে এখানে কর্মরর্ত আছি । কিন্তু অনেক চেষ্টা করে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র হাসপাতালের মহাপরিচালক ও ঢাকা জেলা উপ-পরিচালককে এই সারুলিয়া কেন্দ্রে পরিদশনে নিয়ে আসি। তখন তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, পুরনো ভবন ভেঙে নতুন তিন তলা ভবন করা হবে।
ঢাকা জেলা উপ-পরিচালক মির্জা কামরুন নাহারকে দায়িত্ব দেয়া হয় এ কেন্দ্রের ব্যাপারে অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ রাখতে। আমরা পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তর বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ নাগাদ কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একটাই দাবি, প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করে এবং ভবন সম্প্রসারণ করে এটিকে যেন পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের রূপ দেয়া হয়। সেভাবেই যেন অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণ করা হয়। হাজার হাজার অসহায় দরিদ্র মানুষ যেন সেবা নিতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
জেএম