ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কীটনাশকের পরিবর্তে নিম পাতার রস!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
কীটনাশকের পরিবর্তে নিম পাতার রস! কীটনাশকের পরিবর্তে নিম পাতার রস!

ছোট টেংরা গ্রাম ঘুরে এসে: নাম মো. হানিফ হাওলাদার। পাথরঘাটা উপজেলার ছোট টেংরা গ্রামের মৃত আবদুল মজিদ হাওলাদারের ছেলে।

বাবা উচ্চ শিক্ষিত হলেও হানিফ সংসারের অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুনোতো দূরের কথা নিজের নামও লিখতে পারেন না তিনি।

হানিফ নিজে শিক্ষিত না হলেও নিজের চার সন্তানের তিনজনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন আর তিনি নিজের বুদ্ধি ও শ্রম দিয়ে কৃষিতে ঘটিয়ে চলেছেন বিপ্লব।

প্রায় তিন একর জমিতে সবজি আর ফল চাষ করছেন তিনি। কিন্তু তাতে কোনো কীটশনাশক বা সার ব্যবহার করছেন না। নিজের গবেষণায় তৈরি নিম পাতার রস কীটনাশকের বিকল্প আর গোবর সার রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন। হানিফের দাবি, তার ফলানো সবজি পাথরঘাটার মানুষের চাহিদার তিন ভাগের দুই ভাগ পূরণ করছে।

কয়েক বছর আগেও অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন হানিফ। ১০ বছর আগে অন্যের জমিতে মজুর খেটে তিন কাঠা জমি কেনেন। কৃষির প্রতি তার অদম্য ঝোঁক। কিন্তু নিজের চাষযোগ্য কোনো জমি না থাকায় অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সফলতা পান তিনি। অন্যের জমি চাষাবাদ করে যে টাকা আয় হয়েছে তা দিয়ে সংসার পরিচালনা করতেন আর কিছু টাকা জমিয়ে রাখতেন। জমিয়ে রাখা টাকা দিয়ে আস্তে আস্তে জমি কিনেছেন তিনি। এখন তার জমির পরিমাণ তিন একর।

কীটনাশকের পরিবর্তে নিম পাতার রস!

এখন নিজের জমিতে শিম, লাউ, লাল শাক, কপি, করলা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি থেকে শুরু করে সব রকমের সবজি, আখ, অসময়ে বাঙ্গি চাষ করছেন তিনি। সবজির নিচে রয়েছে মাছের ঘের। এছাড়া রয়েছে ২০টি গরু ও সাতটি ছাগল। কৃষি কাজের আয় দিয়েই চলে হানিফের সংসার। চলে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। অর্থের অভাবে শুধুমাত্র বড় ছেলে নাসিরকে পড়াতে পারেননি। নাসির পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এখন তার সঙ্গে কৃষি কাজ করছেন। মেঝ ছেলে মো. সোহেল অনার্স তৃতীয় বর্ষ, সেঝ ছেলে হেলাল এইচএসসি আর ছোট ছেলে রিপন ক্লাস সেভেনের ছাত্র।

কৃষি কাজে বড় ছেলের পাশাপাশি স্ত্রী ও অন্য তিন ছেলেও তাকে সহযোগিতা করেন।

কৃষিতে নিম পাতার রস ব্যবহারের ব্যাপারে সফল চাষি হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, যে জিনিস খাওয়ার জন্য সেটিকে কি আমি বিষ দিবো? আমি রাসায়নিক সার আর কীটশনাক ব্যবহার করছি না। সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছি গোবরের ফাঁস আর কীটশনাকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছি নিম পাতার রস।

তিনি বলেন, নিম পাতার ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে যদি দাঁত পরিষ্কার হয়, তাহলে নিম পাতার রস ব্যবহার করলে ফসলের পোকা দমন হবে না কেন? এমন চিন্তা করে আমি নিম পাতার বেটে রস দিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে সবজি ক্ষেত্রে স্প্রে করে দেখি যে তাতে পোকা দমন হচ্ছে।

কীটনাশকের পরিবর্তে নিম পাতার রস!

কৃষি কাজ আমি নিজেই শিখেছি, কারো কাছ থেকে শিখিনি। প্রতি বছর সবজি বিক্রি করে যা আয় হয়, তা থেকে সব খরচ মিটিয়ে পুঁজি থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। একবার তরমুজ চাষ করেছিলেন। কিন্তু এখানে বালু মাটি না থাকায় ফলন ভালো হয়নি। তাই আর তা চাষ করছেন না, যোগ করেন হানিফ।

কীটনাশকের পরিবর্তে নিম পাতার রস!

পাথরঘাটা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হানিফের ক্ষেত পরিদর্শন করে তার পোকা দমন পদ্ধতির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। কৃষি অফিস থেকে তাকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সাহার্য করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad