ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘এই শাস্তি রাজীব মীরের পাওনা ছিল!’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
‘এই শাস্তি রাজীব মীরের পাওনা ছিল!’ ফাইল ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: একাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাজীব মীরকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এ শাস্তি দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজীব মীরকে চাকরীচ্যুত করা হলেও ঠিক কি কি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরীচ্যুত করা হল, তা অজানাই ছিল সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের কাছে। তবে গত ১৩ই জুলাই (বৃহস্পতিবার) বাংলানিউজে ‘ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন ছিল রাজীব মীরের রুটিন অপকর্ম’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

 

সেখানে রাজীব মীরের সাবেক কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সদ্য-সাবেক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে করা সকল অপকর্মের ফিরিস্তি উঠে আসে। এরপর থেকেই জবি ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে রাজীব মীরের প্রতি ধিক্কার।  

গত ৯ জুলাই (রবিবার) সিন্ডিকেট-সভা শেষ হলে সবার আগে বাংলানিউজে ‘যৌন হয়রানিতে চাকরি গেল রাজীব মীরের’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে অনেকে রাজীব মীরের পক্ষে এ শাস্তির পরিবর্তে প্রশাসন কিছুটা নমনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারত বললেও বাংলানিউজে তার কৃতকর্মের বিস্তারিত পড়ার পর ‘এই শাস্তি রাজীব মীরের পাওনা ছিল!’ এরকমটাই বলছেন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক সবাই।

জবির বাংলা বিভাগের এক ছাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, শুধু জানতাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হয়রানি করেছেন তার ছাত্রীদের। কিন্তু একটি সংবাদ পড়ে জানলাম তার চরিত্র আসলে কতটা খারাপ। যে শিক্ষক নিজের মেয়ের বয়সী ছাত্রীদের সাথে এমন নোংরা আচরণ করতে পারেন, তাকে দিয়ে খারাপ আরো অনেক কিছুই সম্ভব। তাকে বরখাস্ত করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। এমন কঠিন শাস্তি তার পাওনা ছিল! 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একজন মন্তব্য করেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার এই শিক্ষক ছাত্রাবস্থায় ছিলেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতা। পরবর্তী সময়ে অংশত নিজের মেধা আর অংশত দলীয় প্রভাবের জোরে হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা থাকাকালীন রাজীব মীরের বিরুদ্ধে আগেও যৌন নিপীড়নের বহু অভিযোগ ছিলো।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিবিএ অনুষদের একজন নবীন শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, রাজীব মীরের বিরুদ্ধে ঠিক কি কি অভিযোগ ছিল তা জানতাম না। কিন্তু বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর তার কুকীর্তি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পাই। তার চাকরিচ্যুতিতে একজন শিক্ষক হিসেবে প্রথমে কিছুটা খারাপ লেগেছিল; কিন্তু যখন পুরো ঘটনা জানলাম তখন মনে হয়েছে সে শিক্ষক জাতির কলঙ্ক। শুধু চাকরি থেকে অপসারণ নয়, তাকে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানাই।  

ফাইল ফটো জবি শাখা ছাত্রফন্টের সভাপতি মেহরাব আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের ঘটনা নতুন কিছুই নয়। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা এবং ভোগবাদী সংস্কৃতির কারণে বারবার এমন কলঙ্কের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সম্প্রতি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাজীব মীর কর্তৃক একাধিক ছাত্রী লাঞ্চনার ঘটনাও তারই প্রমাণ। সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রীদের বলিষ্ঠ প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক রাজীব মীরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করায় সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাহসী ছাত্রীদের ধন্যবাদ জানাই।  


জবি প্রেসক্লাবের সভাপতি সুব্রত মণ্ডল তার ফেসবুক ওয়ালে সন্তোষ প্রকাশ করে লেখেন, ‘বহুদিন পর তার পতন হয়েছে। ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ একের পর এক অপরাধ করে গেছেন তিনি। এমনকি তার পক্ষে মিথ্যা নিউজ করার জন্য ফোন আসতো মিডিয়া মোড়লদের কাছ থেকে। এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হলো না তার।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের এক ছাত্রী নিউজ শেয়ার করে তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘ধন্যবাদ বাংলানিউজকে! বাংলানিউজের মাধ্যমে তার ব্যাপারে আজ অনেক কিছুই জানতে পারলাম, যা আগে জানা ছিল না। একটা মানুষ কিভাবে এতটা নীচ হতে পারে? নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রীদের সাথে এমন কাজ? ছি......!’
 
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, রাজিব মীরের এই বিষয়টি আমাদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো চেপেছিল অনেকদিন। আমাদের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে নানানভাবে চাপ ছিল।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিব মীরের বিরুদ্ধ্বে আনিত অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হেলেনা ফেরদৌসী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার নতুন করে বলার কিছু নেই। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছিল, তা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। ’

তবে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বা আলোচনা করলেও একেবারেই নীরব রাজীব মীরের নিজ বিভাগ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা কেউ এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
ডিআর/জেএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।