ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘সরকারের প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করবো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
‘সরকারের প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করবো’ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ অনুষ্ঠান- ‍বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, সরকার কেন, যেকোনো প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকেই আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। এমনকি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের অনুষ্ঠানে রোববার (১৬ জুলাই) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলো ঘরোয়াভাবে রাজনৈতিক আলোচনা করতে পারবে কি-না এগুলো দেখা আমাদের বিষয় নয়। এগুলো সরকারের বিষয়। আমরা শুধু নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করি। কিভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা যায়, আমরা শুধু সেটা নিয়েই ভাবি। এটা আমাদের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। ’

‘সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন করার জন্য নিজেদের ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। সরকারের কেন, যেকোনো দল এবং দেশি-বিদেশি সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকেই আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পরিকল্পনা করতে পারবো। ’

কেএম নুরুল হুদা বলেন, এ সরকারের অধীনে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবো। আমি বারবার বলেছি, আমাদের কর্তৃত্ব শুরু হবে তফসিলের পর থেকে। এখন কিন্তু সরকারি কর্মকাণ্ডের ওপর হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার আসলেই নেই। আমাদের কি কাজ সেটা আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা আছে। আমরা শুধু সেই কাজগুলোই করে যাবো। সে পথে যাবো।

বর্তমান সময়ে দলগুলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। আবার সরকারেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমাদের দায়িত্ব হলো এই, আমাদের আইন আছে, বিধিবিধান আছে, তাতে সব দলের সমান সুযোগ করে দেওয়া। কাজেই আমাদের যে আইন আছে, তার মাধ্যমে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করা আমাদের দায়িত্ব।

‘তবে তফসিল ঘোষণার আগে সবার জন্য সমান সুযোগ করে দেওয়া বা মিছিল মিটিং করার সুযোগ করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। নির্বাচন কমিশনের কাজ টেকনিক্যাল। কিভাবে নমিনেশন জমা দেবে, ভোটকেন্দ্রে যাবে এ পরিবেশ নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব। সুতরাং বাইরে রাজনৈতিকভাবে পল্টনে অথবা সোহরাওয়ার্দীউদ্যানে কে কিভাবে বক্তৃতা দেবে, না দেবে, মিটিং করতে পারবে কি পারবে না, সেটা দেখার দায়িত্ব মোটেই আমাদের ওপরে নেই। ’

‘তফসিল ঘোষণার পর সরকারের কাছে সহযোগিতা চাইবো। কিন্তু এ মুহূর্তে সরকারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারি না। কোনো রাজনৈতিক দল কিভাবে সভা করবে তা আমরা বলতে পারি না। তফসিল ঘোষণার আগে এটা বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। ’

কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় হেনস্তার শিকার হলে দায় কে নেবে? প্রশ্নের জবাবে কেএম এমন নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের কোনো প্রক্রিয়া যদি কেউ ব্যাহত করে, প্রার্থী হতে যদি কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তার জন্য আমাদের আইন আছে, সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৬ নম্বর চ্যাপ্টারে দল, প্রতিনিধি ও ভোটারদের আইনগত প্রটেকশন দেওয়ার বিধান আছে। ’

নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে, তা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামরিক বাহিনীসহ সবার সঙ্গে বৈঠক করি আমরা। সব সংস্থার প্রধানরা বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। সেখানে কার কি দায়িত্ব তা ব্যাখ্যা করি। এজন্য বিভিন্ন নির্বাচনী বিধি আছে।

সরকার কথা না শুনলে কি করবেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘কর্তৃত্ব সংবিধানে যতটুকু আছ, ততটুক করতে পারবো। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা দল যদি এগিয়ে আসে তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যে আইন আছে, সেগুলো প্রয়োগ করা সম্ভব। সেগুলো আমরা সিরিয়াসলি দেখবো। ’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম চালুর দরজা বন্ধ করিনি। এটা ব্যবহার করা যাবে কি না, সেটা সংলাপে কি প্রস্তাব আছে, তার ওপর নির্ভর করবে। আগে ভুল ভ্রান্তি হওয়ার কারণে এটা বন্ধ আছে। আমাদের কাছে মাত্র ৭-৮শ’ মেশিন আছে। যেগুলো ৫-৬ বছরের পুরনো। এ সময়ে প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমাদের ২ লাখ ৫০ হাজার বুথ, আছে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে। এটা যে অসম্ভব হবে তা নয়। তাই আমরা বন্ধ না রেখে স্কোপ রেখেছি। আড়াই লাখ মেশিন কেনা, ট্রেনিং দেওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় বাস্তবসম্মত বলে আলোচনায় উঠে আসে, সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। এখানে সরকারের সহায়তা একটা বিষয় আছে। ’

কেএম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচনের তফসিল কখন হচ্ছে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি যদি সংসদ আগামী সপ্তাহে ভেঙে দেন তবে, এর পরের নব্বই দিনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। অন্যথায় ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানের অন্য নির্বাচন কমিশনার ও সংস্থাটির কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন।

নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করলো ইসি

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad