তিস্তার কড়াল গ্রাসে বিধ্বস্ত হয়েছে লালমনিরহাটের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শত শত বসত বাড়ি। নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে ফসলি জমি, খেলার মাঠ নিঃস্ব হয়েছে হাজারো মানুষ।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা অংশে তিস্তা পারি দিয়ে দেখা গেছে, তিস্তার বুকে অসংখ্য চর জেগে উঠায় নদী প্রায় দু’টিভাবে বিভক্ত হয়েছে। দুই কিনারায় বইছে খরস্রোত, মধ্যে জেগে উঠেছে দ্বীপ চর। এভাবেই দুই তীর গিলে খাচ্ছে তিস্তা।
নৌকায় কথা হয় মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন চরের আব্দুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় নদীর মধ্যে চর জেগে উঠার কারণে দুই কিনারে আঘাত হানছে তিস্তা। এভাবে প্রতিবছর তিস্তা নাব্যতা হারিয়ে ভাঙছে বসতবাড়ি ও স্থাপনা। ভিটেমাটি আর ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে তিস্তা খনন করে বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই বলে দাবি করেন তিনি। গোবর্দ্ধন এলাকার মেহের আলী (৬৫) শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে তিস্তার কড়াল গ্রাসে বসত ভিটা হারিয়েছেন। ভিটেমাটি হারানোর দলে যোগ হয়েছেন তার ১২ জন প্রতিবেশী। মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে ওই পাড়ার ১২টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এসব পরিবারের আশ্রয় হয়েছে খোলা আকাশের নিচে, বাঁধ বা রাস্তার ধারে। আবার কেউ চড়া মূল্যে জমি বন্দক নিয়ে ঘর তুলছেন।
মেহের আলী বাংলানিউজকে জানান, ছেলেদেরসহ তিনটি ঘর ছিল। সরিয়ে নিয়েছেন। জায়গার অভাবে দু’টি ঘর কাদা মাটিতে ফেলে রেখেছেন। চড়া মূল্যে বন্দক নেয়া দুই শতাংশ জমিতে একটি ঘর দাঁড় করিয়ে সেখানেই রাত কাটাচ্ছেন তারা।
একমাত্র সম্বল গরুটি বিক্রি করে নদীতে ভেঙে যাওয়া ঘর জোড়াতালি দিচ্ছেন গোবর্দ্ধন হাজীপাড়ার বজলার রহমান। এবারসহ মোট আট বার বাড়ি সরাতে হয়েছে তাকে। তার ভাষায় ‘তিস্তা হামাক (আমাদেরকে) ছাড়বে না, ভাই’।
ভাঙনের মুখে রয়েছে গোবর্দ্ধন জামে মসজিদ, ইসমাইল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বাড়ি। যে কোনো মুহূর্তে এসবও বিলিন হতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছেন তিস্তা পাড়ের মানুষের।
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, তার ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহে ৩৭টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। প্রতিনিয়তই ভাঙছে তিস্তার দু’কূল।
হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম কায়েদ বাংলানিউজকে জানান, তিস্তার ভাঙনে পাঁচদিনে তার ইউনিয়নের ৭০টির মতো বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব ডাউয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ডাউয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়গুলো সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার এমএম আরাফাত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রোববার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টা পর্যন্ত ভাঙনের কোনো তালিকা তার দফতরে পৌঁছেনি। তবে ভাঙনের তথ্য সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছাবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
আরবি/