ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পানিত ডুব্বা মরি গেলুও, হামির কব্বর ছারুম না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
পানিত ডুব্বা মরি গেলুও, হামির কব্বর ছারুম না পানিত ডুব্বা মরি গেলুও, হামির কব্বর ছারুম না

গাইবান্ধা: ‘পানিত হাটন চলন করতি করতি হাত পাও কোকড়া নাগি আসে। হাটন চলন করতি পানিত উল্টি পরম। হাতে-পায়ে চুলকানি আর ঘাও হইছে। কখন যানি পানিত ডুব্বা মরম। পানিত ডুব্বা মরি গেলুও, হামির (স্বামী) কব্বর (কবর) ছারুম না’।

পানিত সাপ কেলকেল করি চোক্খের সামনত ঘুরে। মারতিও পারম না, পালাতিও পারম না।

ঘরের চকিখেন পানিত ডুব্বা গেছে। মাজার মদ্দে আত্তি (রাত) যাপন করতিছম। চুলে কোনাও ভাগ্গি গেছি, এহন মারষে যেকনা (যেটুকু) দেয় তাই খাম।

কথাগুলো বলছিলেন, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার হলদিয়া গ্রামের রমেছা বেওয়া (৭০)।

বহুবার তিনি বন্যার সম্মুখিন হয়েছেন। একবার বন্যার পানিতে ডুবে তার স্বামী মারা যান। এরপর থেকে অনেকবার বন্যায় আক্রান্ত হলেও তিনি বাড়ি ছাড়েননি।

পানিত ডুব্বা মরি গেলুও, হামির কব্বর ছারুম নাতিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, নদী ভাঙন আর বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেলেও স্বামীর ভিটেমাটি আর তার কবর ছেড়ে কখনই পালাবেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বন্যার পানির ভয়ে স্বামীসহ বহুবার ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে অজানায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু মাটির টানে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ফের আগের জমিতেই যেতে হয়েছে তাদের। পরের বছর আবার একই চিত্রের সম্মুখিন হতে হয়েছে।

এদিকে, গত দশদিন ধরে জেলার চার উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি থাকলেও। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার কমে (স্বাভাবিক লেভেল ১৯ দশমিক ৮২) ২০ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার কমে (স্বাভাবিক লেভেল ২১ দশমিক ৭০) বিপদসীমার ২১ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়ার পানি অপরিবর্তীত রয়েছে বলে জানিয়েছেন, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।

পানিত ডুব্বা মরি গেলুও, হামির কব্বর ছারুম নাতবে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও জেলার চার উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ১৯৪টি গ্রাম ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুভোর্গে রয়েছেন।  সেইসঙ্গে তীব্র ভাঙনেন কবলে পড়ে জেলায় তিন শতাধিক পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া ভাঙনে দুই শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।

এছাড়া বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮১ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তা। ২৫৪ হেক্টর পাট, আউশ ধান, আমন বীজতলা বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে।

তবে, বর্ন্যাতদের জন্য ৮২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র চলমান থাকায় ৪ হাজার ৯২০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।  

জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, এ পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে ৩২৫ মে. টন চাল, ১৮ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ২৯৫ মে. টন চাল ও ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।  

তিনি আরও জানান, ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে আরও ৩০ মে. টন চাল, ৫০ হাজার টাকা এবং ২ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।