ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঢামেক পরিচালকের দুর্নীতির তদন্ত অগ্রগতি-শূন্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
 ঢামেক পরিচালকের দুর্নীতির তদন্ত অগ্রগতি-শূন্য ঢামেক ও দুদকের লোগো

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) পরিচালক ও  উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য গত ২৩ মার্চ পরিচালক নিয়োগ দেয় দুদক।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১ এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়।  কিন্তু  তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো কোনো কিনারা খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি।

দুদক সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঢামেকের কর্মচারীদের বেতনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান ও উপ-পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।  পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধান কমিটির পক্ষ থেকে ৫ এপ্রিল ঢামেক হাসপাতালের পরিচালককে তদন্তের স্বার্থে ১১ এপ্রিল যাবতীয় নথিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দুদকে সরবরাহের জন্য বলা হয়।  ঢামেক পরিচালক দুদকের চাহিদা অনুসারে সকল কাগজপত্রও সরবরাহ করেন।  

এদিকে দুদকের অনুসন্ধানী টিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ যাবৎ তারা প্রায় ৬০ জনের মতো কর্মচারীর বক্তব্য নিয়েছেন। কিন্তু কোনো কর্মচারী প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটনে সহায়ক কোনো তথ্য দেননি। এমনকি ঘটনার কোনো ক্লুও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।  তবে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা এটাও বলছেন, এই মুহুর্তে তারা কোনো তথ্য না পেলেও তদন্তের হাল ছাড়তে রাজী নয়।    

ঢামেক পরিচালকের দুর্নীতি নিয়ে ভুক্তভোগীরা তখন গণমাধ্যমে বলেন, চাকরি হারানোর ভয়সহ নানা কারণে নিজেদের ওপর এমন অনিয়ম তারা মানতে পারছেন না। এমনকি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও উপ-পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসও পাচ্ছেন না। ফলে সব অনিয়ম মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ছিলো, গত ১৬ জানুয়ারি ঢামেক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বকেয়া বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা-ভাতার টাকা দেয়া হয়। প্রত্যেকের নামে ৮৮ হাজার ৭৮৪ টাকা করে বরাদ্দ এলেও দেয়া হয় ৫৩ হাজার ৭০০ টাকা করে।  ফলে প্রত্যেকের বেতন থেকে ৩৫ হাজার ৮৪ টাকা করে কেটে রাখা হয়। এ হিসাবে ২৬৮ জনের কাছ থেকে কেটে নেয়া হয়েছে ৯৪ লাখ দুই হাজার ৫১২ টাকা।  এমনকি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ‘বকেয়া সমুদয় টাকা বুঝিয়া পাইলাম’ মর্মে লিখিত রাখেন হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আলমগীর।

জানা যায়, ২০০৯ সালে ঢামেকে ১৭১ কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ২০১০ সালে নিয়োগ দেওয়া হয় ৩৫৪ জন কর্মচারী। কিন্তু কর্মস্থলে যোগদান করতে না দেওয়ায় হাইকোর্টে রিট করেন নিয়োগ প্রাপ্তরা। ওই রিট আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীদের মধ্যে ৩১৫ জন কর্মস্থলে যোগদানের সুযোগ পান। কিন্তু তাদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা-ভাতা বন্ধ থাকে। এর মধ্যে কয়েকজন কর্মচারী অন্যত্র বদলি হয়ে যান। তবে ঢামেক হাসপাতালে কর্মরত ২৮৪ কর্মচারী তাদের বকেয়া বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা-ভাতা আদায়ে হাসপাতালের নেতাদের সহযোগিতায় আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলা পরিচালনার জন্য এসব কর্মচারী ২০১৫ সালে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে ২৮ লাখ টাকা নেতাদের দেন। পরে আদালতের মাধ্যমে জনপ্রতি বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা-ভাতা বাবদ ৮৮ হাজার ৭৮৪ টাকা করে বরাদ্দ পান। ওই টাকা গত ১৬ জানুয়ারি দেওয়ার সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩৫ হাজার ৮৪ টাকা করে কেটে রাখা হয় বলে ভুক্তভোগীরা গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ঢামেক পরিচালকের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জানা মতে, তদন্ত কমিটি এখনো কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি। দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
এসজে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।