দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ হ্যাচারি এলাকায় এসে গাড়ি নিয়ে সিরিয়ালে আটকে পড়েন তিনি। তবে হ্যাচারি এলাকা থেকে ফেরি ঘাটের দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা।
দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত বয়ে চলেছে। এছাড়া দৌলতদিয়া দুই নম্বর ফেরি ঘাটের র্যাম্প বেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চারদিন ধরে সেটি বন্ধ রয়েছে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি পারাপারে দ্বিগুণ সময় লাগায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হওয়ায় মইনউদ্দিন ও তার গাড়ির যাত্রীদের মতো হাজারো মানুষকে এমন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এ দীর্ঘ ভোগান্তি পেরিয়ে ফেরিতে ওঠার পর যাত্রী ও গাড়ি চালকরা হাফ ছেড়ে বাঁচছেন।
ফেরিতে ওঠার পর সোহাগ পরিবহনের চালক মইনুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সিরিয়াল না থাকলে বাংলাদেশ হ্যাচারি এলাকা থেকে ফেরিতে ওঠা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সেই পথ আজকে পারি দিতে সময় লাগলো দীর্ঘ সাত ঘণ্টা। এরপরেও ফেরিতে ওঠার পর অনেক স্বস্তি পেয়েছি। নিজের চেয়ে বেশি কষ্ট লাগে যাত্রীদের দুর্ভোগ দেখে।
বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যেসকল যাত্রীরা গাড়িতে ওঠেন, তাদের কাছে সিরিয়ালে আটকে থাকার সময় খুব কষ্টের।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে ঢাকাগামী দিগন্ত পরিবহনের যাত্রী রকিব বাংলানিউজকে বলেন, সিরিয়ালে ছয় ঘণ্টা আটকে থেকে অবশেষে বাস নিয়ে ফেরিতে উঠতে পারলাম। এখন ভালো লাগছে। তবে দুপুরে মনে হয়েছিলো সাঁতরিয়ে নদী পার হয়ে ওপারে যাই। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না।
রাত সাড়ে সাতটার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারি এলাকা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তারজুড়ে দুই সারিতে শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ও তিন শতাধিক ট্রাক ফেরিতে ওঠার জন্য সিরিয়ালে আটকে রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি পার হতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা। কিন্তু পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে এখন একেকটি ফেরি পার হতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে।
তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে দুই নম্বর ফেরি ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বাকি তিনটি ঘাট সচল রয়েছে। সিরিয়ালে আটকে থাকা যানবাহনগুলো পারাপারে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার সালমা বেগম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফেরি চলাচলে দ্বিগুণ সময় লাগায় ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল সৃষ্টি হয়েছে। নদী পারের অপেক্ষমান যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সেখানে পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
বিএস/