ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার এমনি একটি গ্রামের নাম উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা গ্রাম। চরাঞ্চলের এই গ্রামটিতে প্রায় দুইশ' পরিবারের বসবাস।
বড় কোনো নৌকা আসতে দেখলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানি সাতরিয়ে, কলাগাছের ভেলায় চেপে ছোটে শুকনো খাবার বা ত্রাণের আশায়।
কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার উপরি দিয়ে প্রাবহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে এই অববাহিকার প্লাবিত জনগোষ্ঠীর।
শনিবার (১৫ জুলাই) ভোর ৬টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেনিইমটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপচরসহ জেলার সাত উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রামের প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। পানিবন্দি বেশির ভাগ মানুষের ঘরের সঞ্চিত খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা খাদ্য সংকটে পড়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। অপ্রতুল ত্রাণ নিয়ে বিপাকে জনপ্রতিনিধিরা। চারণ ভুমি তলিয়ে থাকায় চরাঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে গো খাদ্যের তীব্র সংকট। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা গ্রামের মমতাজ বেগম (৪০), নাসিমা খাতুনসহ আরো অনেকে বাংলানিউজকে জানান, ১০ দিন ধরি বানের পানিত ভাইসতেছি। ঘরের ভিতরা মাজা পানি আর দুয়ারে এক গালা পানি। ছেলে মেয়ে নিয়্যা খুব কষ্টে আছি। রান্না করতে পানি ন্যা, খাইতে পারি না। বাচ্চা গুল্যা খিদার জ্বালায় কান্নাকাটি করে। কিছু দিব্যার ও পারি না।
বালাডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনির ছাত্রী আরজিনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, চতুর্দিকে পানি, স্কুলে যাইবার পারি না। রাস্তা-ঘাট সব তলাইয়া গেছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন মাস্টার বাংলানিউজকে জানান, তার ইউনিয়নে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ হাজার পরিবারের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ১০ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। আরো তিন হাজার পরিবারকে এখনও কোনো সকায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিনই বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ আসছে এবং আমরা তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিতরণ করছি। বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চারশ’ মেট্রিক টন চাল, ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও চার হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সোমবার (১৭) কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপরি দিয়ে, সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমা ছুঁয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
এএটি/