ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবশেষে ঝামেলা ছাড়াই চেন্নাই যাচ্ছেন অসুস্থ নারী

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
অবশেষে ঝামেলা ছাড়াই চেন্নাই যাচ্ছেন অসুস্থ নারী কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত গৃহবধূ কামরুন্নেচ্ছাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: এক অসুস্থ নারীর সব চিকিৎসা পরিকল্পনা ও ভারত যাত্রা তছনছ করে দেওয়া মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্স অবশেষে দুঃখ প্রকাশ করেছে।     


 

বাড়তি কোনো ঝামেলা ছাড়াই আগামী সোমবার (১৭ জুলাই) পরিবারসহ তার ভারতের চেন্নাইয়ে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থাটি।

এয়ারলাইন্সটির কর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত গৃহবধূ কামরুন্নেচ্ছা (৫৩)।

তাকে বঞ্চিত হতে হয়েছে সময়মতো চিকিৎসা থেকে। হয়রানির শিকার হতে হয়েছে পুরো পরিবারটিকেও।

মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের এ অমানবিক আচরণের শিকার হয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন-হয়রানিতে ক্লান্ত পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।

এ বিষয়ে শুক্রবার (১৪ জুলাই) বাংলানিউজে ‘গুরুতর অসুস্থ নারীকে রেখেই ঢাকা ছাড়লো মালদিভিয়ান এয়ার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তোলে।

তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান পাঠকরা। এ ঘটনায় স্বেচ্ছাচারী আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মীদের শাস্তি ও জবাদিহিতাও দাবি করেন অনেকে। তবে, উড়োজাহাজ উড়ে যাওয়ার পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। পরিস্থিতি সামলাতে এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই ছুটে যান রোগীর কাছে। তারা দুঃখ প্রকাশ করে জানান, আগামী সোমবার বিকেলের ফ্লাইটে পরিবারটির চেন্নাই যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনজনের টিকিটও হাতে ধরিয়ে দেন তারা।

** গুরুতর অসুস্থ নারীকে রেখেই ঢাকা ছাড়লো মালদিভিয়ান এয়ার

এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের হেনস্থার শিকার যাত্রী কামরুন্নেচ্ছার স্বামী সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার রফিকুল ইসলাম (৫৭) শনিবার বাংলানিউজকে বলেন, ‘তারা কেবলমাত্র স্বেচ্ছাচারিতাই করেছেন। আপনারা সঙ্গে ছিলেন বলেই হতাশা থেকে আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছি। আসলে আমাদের উড়োজাহাজে প্রবেশের আগ মূহৃর্তে ‘গুরুতর অসুস্থ’ বানিয়ে আমার স্ত্রীর যাত্রা বাতিল করে দেয় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ’।

‘ঠিক সে সময় যদি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি (ইমিগ্রেশন) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) মুকিত হাসান খানের দেখা না পেতাম, তবে আগামী সোমবারের যাত্রাও হতো কি-না, সন্দেহ’।

‘তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মেডিকেল অফিসার, পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক, কারো সনদকেই পাত্তা দেননি’- বলেন রফিকুল ইসলাম।

এ হয়রানির জন্য মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার রেহনুমা শেখকেই দুষছেন হেনস্থার শিকার পরিবারটি।

শুক্রবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ১৭৫ জন যাত্রী নিয়ে ভারতের চেন্নাই হয়ে মালদ্বীপে যাওয়ার কথা ছিল মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের Q2-551 নম্বর ফ্লাইটটি। ওই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন রফিকুল ইসলাম, জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত স্ত্রী কামরুন্নেচ্ছা ও মেয়ে আয়েশা আক্তার রুমকি (২৪)।

শনিবার চেন্নাইয়ের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের (সিএমসি ভেলোর) একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গেও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। সেখানকার হোটেল বুক করাও ছিলো তার।

স্ত্রীকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিমানবন্দরে চলে আসেন রফিকুল ইসলাম। বোডিং পাস ও ইমিগ্রেশনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উড়োজাহাজে ওঠার ঠিক আগ মুহূর্তে ইমিগ্রেশন ন্যাচারালাইজেশন সার্ভিসের (আইএনএস) ৪ নম্বর গেটে পৌঁছামাত্র বলা হয়, কামরুন্নেচ্ছা উড়োজাহাজে  যাত্রার জন্যে শারীরিকভাবে সক্ষম নন। ‘গুরুতর অসুস্থ’ বানিয়ে তার যাত্রা বাতিল করে দেওয়া হয়।

ফলে কামরুন্নেচ্ছার সঙ্গে অ্যাটেনডেন্ট ভিসায় ভারতে গমনেচ্ছু স্বামী ও মেয়েও বাধ্য হন যাত্রা বাতিল করতে।

পরে যাত্রা সামান্য দেরি হলেও চিকিৎসা প্রত্যাশী  পরিবারটিকে ফেলেই চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে উড়ে যায়  মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিমানবন্দরের অ্যাম্বুলেন্সে আমার স্ত্রীকে নিয়ে পৌঁছামাত্রই তার ছবি তুলে নিয়ে যান মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের কর্মীরা। তখন তিনি অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্রেচারে শুয়েছিলেন। সেই ছবি নিজেদের হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে গুরুতর অসুস্থ বানিয়ে আমার স্ত্রীর যাত্রা বাতিল করে দেন তারা’।

‘অথচ দীর্ঘ সময় তিনি হুইল চেয়ারে করে বিমানবন্দরে অবস্থান করলেও সেই সাধারণ বিষয়টিই এড়িয়ে গেলেন তারা। মনগড়া সিদ্ধান্ত নিয়েই আমার স্ত্রীর যাত্রা বাতিল করলেন। সারা জীবনেও যা কখনো ভুলতে পারবো না’।

তিনি বলেন, ‘বাংলানিউজে খবরটি প্রকাশের পর পরই মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের চিফ কর্মাশিয়াল অফিসার রেজা আমিন ও স্টেশন ম্যানেজার রেহনুমা শেখ ছুটে যান ইমিগ্রেশন কার্যালয়ে থাকা আমার স্ত্রীর কাছে’।

সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চলে, আগামী ফ্লাইট সোমবার- এ কথা বলে সেখানে তারা দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে আগামী সোমবার ঠিক একই সময়ের ফ্লাইটের তিনটি টিকিট তুলে দেন আমাদের হাতে’।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি (ইমিগ্রেশন) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) মুকিত হাসান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। তারা যাত্রী পরিবহন না করার বিষয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, যুক্তি ও ঠুনকো অজুহাত তুলে ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছিলো। তবে তা সন্তোষজনক না হওয়ায় আমরা গ্রহণ করেনি। ইতোমধ্যে বিষয়টি গণমাধ্যমে এলে তারা যাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন। যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তাদের আগামী সোমবারের ফ্লাইটে চেন্নাই যাওয়ার নিশ্চয়তা ও তিনজনের হাতে টিকিট তুলে দেন’।

এদিকে বাংলানিউজে খবরটি প্রকাশের পর অসংখ্য পাঠক রোগীর প্রতি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান।

সেলিম নয়ন লেখেন, ‘নিন্দাসহ প্রতিবাদ জানাচ্ছি মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে। স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরায় বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ’।

ফরিদ তালুকদার মন্তব্য করেন, ‘এটি কোন দেশের এয়ারওয়েজ? কঠোর ব্যবস্থা দাবি করছি এ সংস্থার বিরুদ্ধে’।

আব্দুর রহমান মন্তব্য করেন, ‘অত্যন্ত অমানবিক কাজ। কর্তৃপক্ষের শাস্তি হওয়া উচিৎ’।

** গুরুতর অসুস্থ নারীকে রেখেই ঢাকা ছাড়লো মালদিভিয়ান এয়ার

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
জেডআর/ওএইচ/এএসআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad