ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাঙনে রেকর্ড ভেঙেছে যমুনা-ধলেশ্বরী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
ভাঙনে রেকর্ড ভেঙেছে যমুনা-ধলেশ্বরী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

টাঙ্গাইল: বর্ষা মৌসুমে নদীর ভাঙন স্বাভাবিক ঘটনা হলেও টাঙ্গাইলে এবার যমুনা ও ধলেশ্বরীর ভাঙন অতীত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পানি বাড়ায় নদীতে বেড়েছে স্রোতও। সেই খরস্রোতা স্রোতে প্রতিদিনই ভাঙছে নদী তীরের বসত-বাড়ি, জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। 

স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে শতশত পরিবার। নেদী তীরের সাধারণ মানুষগুলো আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে; কখন নদী গর্ভে চলে যায় শেষ সম্বলটুকুও।

তাই ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।  

সম্প্রতি যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী জনপদ ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢল আর বর্ষণে যমুনা ও ধলেশ্বরীতে পানি বাড়ায় টাঙ্গাইলের কয়েকটি উপজেলায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।  
নদীর ভাঙনের কবলে হাট-বাজার ছবি: বাংলানিউজএরই মধ্যে গত কয়েকদিনে নাগরপুর উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের আগদিঘুলিয়া গ্রামের সাধনা একাডেমিক হাইস্কুল, শতবছরের পুরানো আগদিঘুলীয়া বাজার, কালিমন্দির, শ্মশানঘাটসহ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।  

ফলে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আর এভাবে ভাঙতে থাকলে জেলার নদীপারের এলাকাগুলো বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।  

অন্যদিকে ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে আবাদি জমি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, বোরহান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, নন্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত ভিটা।  

মো. আতাউর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, নদীগর্ভে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ায় তিনি এখন নিঃস্ব। সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরং উল্টো কথা শুনিয়ে দিয়েছেন সংসদ সদস্য। তিনি নাকি বলেছেন এটা তার এখতিয়ারের বাইরে।

**সিরাজগঞ্জের ১৯৪ গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি

শান্ত্বনা মণ্ডল, বয়সে অশীতিপর এই বৃদ্ধ‍া তার শেষ সম্বল ভিটেবাড়ি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন, কখন নদী গর্ভে হারিয়ে যায় তার আশ্রয়স্থলটুকু। যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে তার ভিটেবাড়ি। তাই ঘরের বাইরে বসেই অসহায় দৃষ্টিতে নদীর দিতে তাকিয়ে থাকেন তিনি।  

শেষ সম্বলটুকু ভেঙে যাচ্ছে চোখের সামনে ছবি: বাংলানিউজপিন্টু শীল, নয়ন শীল ও রিতা শীলসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, গত কয়েকদিনে নদীর তীব্র ভাঙনে সবারই ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। তারা কেউ কেউ থাকছেন অন্যের বাড়িতে।  

‘অথচ এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কোনো কর্মকর্তাও তাদের খোঁজ নিতে আসেননি,’ অভিযোগ করেন তারা।  

এদিকে জেলার ভূঞাপুর উপজেলার ফকির পাড়া, চর বেতুয়া, চর বামনহাটা, চর কুতুবপুর গ্রামে নতুন করে যমুনার পানি প্রবেশ করেছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।  

অন্যদিকে পানি বাড়তে থাকায় এ উপজেলার গাবসারা, গোবিন্দাসী ও অর্জুনা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। অথচ এসব অবহেলিত মানুষের পাশে এখন পর্যন্তও কোনো ধরনের ত্রাণ পৌঁছায়নি।  

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বাংলানিউজকে জানান, ভাঙন রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া  হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ