ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেতন-ভাতা তুলতেই মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৭
বেতন-ভাতা তুলতেই মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব! শীতলক্ষ্মা সেতু (ফাইল ফটো)

ঢাকা: বৈদেশিক অর্থায়ন না পাওয়া,  বারবার প্রকল্প পরিচালক বদলি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ও রেলওয়ের জমি না পাওয়ায় সাত বছরে নারায়ণগঞ্জবাসীর বহুল প্রত্যাশিত শীতলক্ষ্মা তৃতীয় সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ। প্রায় স্থবির হয়ে থাকা কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও চার বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জনমাস হিসেবে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র এসব জনবলের বেতন-ভাতা তুলতে আবারও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।



শীতলক্ষ্মা নদীর পশ্চিম প্রান্তে সৈয়দপুর ও পূর্ব প্রান্তে মদনগঞ্জকে সংযুক্ত করে চারলেনের ১ হাজার ২৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মিত হওয়ার কথা সৌদি আরবের আর্থিক অনুদানে। তবে সবেমাত্র ফান্ডের নিশ্চয়তা দিয়েছে দেশটি। ফলে এতোদিন কাজ স্থবির হয়েছিল বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অভিযোগ, ধীর অগ্রগতি সম্পন্ন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ৫০ লাখ টাকা, কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৫ লাখ টাকা ও ভাতা বাবদ ৫০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সরবরাহ সেবা ও কর্মকর্তাদের গাড়ি মেরামত বাবদ প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই, অথচ জনমাস হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব ব্যয় হয়েছে আড়াই কোটি টাকা।
 
২০১৭-১৮ অর্থবছরেও একই পরিমাণে ব্যয় হবে। তবে মেয়াদ না থাকায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জনবলের বেতন-ভাতা উত্তোলন করা যাবে না। এ কারণে প্রকল্পটি সংশোধন না করে অন্যায়ভাবে সময় বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। এমন আবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেছে আইএমইডি।
 
৩৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। পরে তিন দফায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ এবং প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৯ কোটি টাকা। চতুর্থ ধাপে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
আইএমইডি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন,  ‘প্রায় সাত বছর ধরেই ধীরগতিতে চলছে প্রকল্পটি। এর আগে তিনবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তখন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব সিসিজিপিতে (সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি) পাঠানোর আগে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধন করতে হবে। সেটি না করে আবারও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে কেবলমাত্র  সংশ্লিষ্টদের বেতন-ভাতা তুলতে’।
 
মন্থর অগ্রগতির কারণ উদ্‌ঘাটনে গত ৩০ মে আইএমইডি’র সহকারী পরিচালক জয়নাল মোল্লা প্রকল্পের কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
 
পর্যবেক্ষণে আইএমইডি বলেছে, গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্জিত এ অগ্রগতির মধ্যে শীতলক্ষ্মা তৃতীয় সেতুর প্রাথমিক কার্যাদিও অন্তর্ভূক্ত। সেতু নির্মাণের ব্যয় বাড়ায় প্রকল্পটি সংশোধনের প্রক্রিয়াধীন আছে। সেজন্য অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে আবারও চতুর্থবারের মতো মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অস্বাভাবিক। এটি পরিহার করা প্রয়োজন।
 
অন্যদিকে সওজ সূত্র জানায়, ২০১১ সালে সাইদুল হককে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে গত সাত বছরে আরও পাঁচজনকে পরিবর্তন করা হয়েছে। সওজের কর্মকর্তা পরিমল বিকাশ সূত্রধর ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দু’বার এবং এম ফিরোজ ইকবাল, দলিল উদ্দিন ও মোহাম্মদ ইকবাল একবার করে দায়িত্ব পালন করেছেন। বারবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে বলেও দাবি সূত্রের।
 
মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে যোগাযোগ করেও  বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ইকবালকে পাওয়া যায়নি। তবে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফারুক জলিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সৌদি উন্নয়ন তহবিল (এসএফডি) ৩১৭ কোটি টাকা দিচ্ছে। তাদের ফান্ড যথাসময়ে না পাওয়ায় কাজে বিলম্ব হয়েছে। তবে এবার ফান্ডের নিশ্চয়তা পেয়েছি। আর কোনো বাধা নেই। আশা করছি, ২০২১ সালের মধ্যেই সেতুটি নির্মাণ করতে পারবো’।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।